গত মার্চ মাসে হওয়া রাশিয়ার নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিন বিপুল ভোটে জয়ী হয়। যার অর্থ রাশিয়ার পঞ্চম রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন আরও ছয়বছর ক্ষমতায় থাকবে। পুতিনের বয়স এখন ৭১ বছর তাই ছয় বছর পরেও পুতিন রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবে কীনা সেটা নিয়ে এখনই প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার রাজনীতিতে ভ্লাদিমির পুতিনের থেকে বড় কেউ নেই। ভ্লাদিমির পুতিনকে নির্বাচনে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার ক্ষমতা রাশিয়াতে কারো নেই। তাই এটা নিশ্চিত যে পুতিন যতদিন বেঁচে থাকবে সেই রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি থাকবে। তবে পুতিনের অবর্তমানে রাশিয়ার প্রধান কে হবে সেটা নিয়ে এখনই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
বিশ্বের প্রায় সমস্ত শক্তিশালী দেশেই শাসকদল ছাড়াও শক্তিশালী বিরোধী দল দেখা যায়। যেমন ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিপক্ষে রাহুল গান্ধীর মতোন প্রতিপক্ষ রয়েছে, আবার আমেরিকাতে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের বিরোধী হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প রয়েছে। কিন্ত রাশিয়া এমনই একটি দেশ যেখানে ভ্লাদিমির পুতিনের কোনও শক্তিশালী বিরোধী প্রতিপক্ষই নেই। শুধু রাশিয়া নয় চীনেও রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর কোনও বিরোধী নেই। যেসব দেশেই কমিউনিজম রয়েছে সেখানেই সাধারনত বিরোধী দল দেখা যায়না। তবে রাশিয়া গনতান্ত্রিক দেশ হলেও সেখানে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী নেই বললেই চলে। রাশিয়া, চীনের মতোন দেশে সরকারের লক্ষ্য থাকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা ধরে রাখা। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকলে দুর্নীতির সম্ভাবনা যেমন থাকে তেমনি দেশটির উন্নয়নের সম্ভবনাও থাকে। কোনও দেশে দীর্ঘমেয়াদি সরকার না থাকলে দেশটির উন্নয়ন থমকে যায়। যেমন পাকিস্তানে কোনও সরকারই তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ন করতে পারেনা, আফ্রিকার দেশগুলোলেও প্রায় সামরিক অভ্যুত্থান হয় যার জন্য পাকিস্তান ও আফ্রিকান দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে।
তাই যেকোনও দেশের উন্নয়নের জন্য একটি স্থায়ী সরকারের ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। তবে চীনের সাথে রাশিয়ার কোনও তুলনা হবেনা কারন চীন কমিউনিস্ট দেশ, চীনে প্রথমথেকে একটিই রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি রয়েছে আর অন্যকোনও বিরোধী দল নেই। কিন্তু রাশিয়া একটি সম্পূর্ন গনতান্ত্রিক দেশ। তবে সম্প্রতি পুতিন তার উত্তরসূরী নিয়ে একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পুতিন তার প্রাক্তন দেহরক্ষী অ্যালেক্সি ডায়ুমিনকে রাশিয়ার অ্যাডভাইসারি স্টেট কাউন্সিলের সেক্রটারি নিযুক্ত করেছেন। অ্যালেক্সি ডায়ুমিনকে পুতিনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলা হয়। রাশিয়ার স্টেট কাউন্সিল সরাসরি রাষ্ট্রপতিকে গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়।
একসময় পুতিনের দেহরক্ষী হিসাবে কাজ করা অ্যালেক্সি ডায়ুমিনকে পুতিন ২০১৪ সালে জিআরইউ মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের ডেপুটি প্রধান নিযুক্ত করেছিল। সেই বছরই রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এরপর রাশিয়ার ডেপুটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদেও ছিল এই ডায়ুমিন। পরে পুতিন ডায়ুমিনকে টুলা অঞ্চলের গভর্নর নিযুক্ত করে। মস্কোর কাছে অবস্থিত এই টুলা অঞ্চল সতেরো শতক থেকেই রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। রাশিয়ার বেশীরভাগ অস্ত্র তৈরি হয় এখানেই। এভাবে রাশিয়ার রাজনীতিতে একেরপর এক গুরুত্বপূর্ন পদে অ্যালেক্স ডায়ুমিনের নিয়োগের কারনে রাশিয়ার রাজনৈতিক মহলের ধারনা হয়ত অ্যালেক্সি ডায়ুমিনই ভ্লাদিমির পুতিনের উত্তরসূরী হতে চলেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের কী ভাবছে তা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়।