রাম সেতু থেকে হনুমানের পায়ের ছাপ। বাল্মিকী রামায়নের নয়টি প্রমান

হিন্দু ধর্মের মহান ধর্মগ্রন্থ বাল্মিকী রামায়ন, যা যুগ যুগ ধরে অগনিত হিন্দু মানুষজনের মধ্যে প্রেরনার স্রোত হিসাবে কাজ করেছে। ভারতবর্ষের আত্মাস্বরূপ প্রভু শ্রীরাম শুধু ভারতবর্ষেই নয় বরং দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার বহু দেশেরই সংস্কৃতির সাথে জড়িত। 

বাল্মিকী রামায়নের নয়টি বিশেষ প্রমান রয়েছে:—- 

১) রাম সেতু:—- বাল্মিকী রামায়ন অনুযায়ী মনে করা হয় ধনুষকোটি সেই জায়গা যেখানে প্রভু শ্রীরাম তার বানর সেনাকে সেতু নির্মানের কথা বলেছিলেন যাতে তিনি লঙ্কা যেতে পারেন। আমেরিকার মহাকাশ গবেষনা সংস্থা নাসার উপগ্রহ চিত্রে এখানে সমুদ্রে ভাসমান পাথর লক্ষ্য করা গেছে যা ভগবানের শ্রীরামের সময়ে তৈরি রাম সেতুকেই নির্দেশ করে।

২) পুষ্পক বিমান পথ:—- রামায়নে বর্নিত আছে রামায়নে রাবনের কাছে বিশেষ পুষ্পক বিমান ছিল। রাবনকে পরাজিত করে দেবী সীতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রভু শ্রীরাম শ্রীলঙ্কা, লেপাক্ষী, হাম্পি ও নাসিক হয়ে অযোধ্যা ফিরে আসেন। লক্ষ্য করার মতোন বিষয় স্থানগুলির স্থানাঙ্ক একই সরলরেখায় অবস্থিত। এত বছর আগে মহাকবি বাল্মিকী কীভাবে জানতেন এই তথ্য তা সত্যিই আশ্চর্যজনক! 

৩) ভগবান হনুমানের পায়ের ছাপ:—- শ্রীলঙ্কা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পুরো এশিয়া জুড়ে বিস্তীর্ন এলাকায় পাথরে হনুমানজীর পায়ের ছাপ রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন গবেষকরা।

৪) অশোক বাটিকা:—- প্রাচীন লঙ্কায় এই অশোক বাটিকাতেই মা সীতাকে অপহরনের পর আটকে রেখেছিল রাবন। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার নুয়ারা অঞ্চলেই অতীতের অশোকা অবস্থিত রয়েছে। এখানে গবেষকরা পাথরে বিশাল পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকদের দাবী ভগবান হনুমান যখন অশোক বাটিকাতে মা সীতার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন তখন তার পায়ের ছাপই এসব পাথরে রয়ে গেছে।

 ৫) সিগিরিয়া :—- শ্রীলঙ্কার সিগিরিয়া পাহাড়েই রাবনের স্বর্ন লঙ্কা অবস্থিত ছিল যেটির নকশা তৈরি করেছিল কুবের। এর নীচেই কোনও একটি গুহাতে মা সীতাকে বন্দী করে রেখেছিল রাবন।

৬) সাপের মাথার আকৃতির গুহা:—  সিগিরিয়ার পাথুরে দূর্গেরই একটি অংশ কোবরা সাপের মাথার আকৃতির এই গুহা। এখানে পারুমাকা নাগুলিয়া লেনা শিলালিপি পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জায়গাতে নাগুলি শব্দের অর্থ মা সীতা বলা হয়েছে। রামায়নের সময়ের পরে খোদাই করা শিলালিপিটি মা সীতাকে নির্দেশ করে।

৭)  কানাইয়ার উষ্ণ কুন্ড:—-  রামায়নে গরম জলের ঝর্নার কথা উল্লেখ আছে। বলা হয় এটা সেই স্থান যেখানে রাবন ও তার মা ভগবান শিবের উপাসনা করেছিলেন। 

স্থানীয় মতবাদ অনুযায়ী এবং গবেষকরাও বলেন যে এই কানাইয়া উষ্ণ কুন্ড রাবনই জল সরবরাহের জন্য তৈরি করেছিল।

৮) লেপাক্ষী মন্দির:—-  এটা সেই স্থান বলে মনে করা হয় যেখানে রাবণের সাথে যুদ্ধ করার সময় জটায়ু পড়েছিলেন। বাল্মিকী রামায়নে বর্নিত আছে রাবন যখন মা সীতাকে অপহরন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জটায়ু রাবনকে বাধা দিয়েছিলেন, তখন রাবন ও জটায়ুর ভয়ানক যুদ্ধ হয়। রাবন জটায়ুর ডানা কেটে দিয়েছিল। 

৯) সঞ্জীবনী পর্বত, দ্রোনগিরি :—– রামায়নে হনুমানজী প্রভু লক্ষনের ঔষধের জন্য যে স্থানে এসেছিলেন সেটি আজ হিমালয়ের দ্রোনাগিরি পর্বত। রামায়নে যুদ্ধের সময় রাবনের ছেলে ইন্দ্রজিৎ এর অস্ত্রের আঘাতে আহত হন প্রভু শ্রীরামের ভাই প্রভু লক্ষনজী। তখন হনুমানজী সঞ্জীবনী ঔষধ বা সঞ্জীবনী বুটি আনবার জন্য দ্রোনগিরি এসে উপস্থিত হন। বৈদ্য সুষেন বলেছিলেন হিমালয়ের দ্রোনাগিরিতেই এই ওষুধ পাওয়া যাবে। এই ওষুধের গাছের বৈশিষ্ট্য ছিল যে এটি রাতের অন্ধকারেও আলোকিত থাকতো। হনুমানজী কোনটি সঞ্জীবনী বুটি তা চিনতে না পেরে দ্রোনাগিরি পর্বতের একাংশ ভেঙে নিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *