চীনকে জবাব দিতে ভারতবর্ষ এবার পাঁচ থেকে ছয়টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করতে চলেছে! জানুন বিস্তারিত

রাজেশ রায়:—- সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন ভারত পাঁচ থেকে ছয়টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করবে। তিনি আরও বলেছেন ভারত খুব শীঘ্রই তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি শুরু করেবে যেটি ৪৫,০০০ টনের আইএনএস বিক্রান্ত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সিস্টার জাহাজ হবে। সিস্টার জাহাজ অর্থাৎ আইএনএস বিক্রান্ত ও তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ডিজাইন একই হবে কিন্তু ডিসপ্লেসমেন্ট ভিন্ন হবে। এই মহূর্তে ভারতীয় নৌবাহিনীতে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আছে আইএনএস বিক্রমাদিত্য যেটি ২০১৩ সালে রাশিয়া থেকে কেনা হয় এবং আইএনএস বিক্রান্ত। এই প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং জানান ভারত এখানেই থেমে থাকবেনা ভারত পাঁচ, ছয়টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করবে।

বহুদিন ধরেই ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিশাল তৈরির দাবি ছিল, এবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট হয়ে গেল তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি হবেই। তবে আইএনএস বিশাল নির্মানে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা খরচ হবে যার অর্থ আরও তিন চারটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করতে দেড় অথবা দুই লাখ কোটি টাকা খরচ হবে। 

বর্তমানে ভূরাজনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। এখানে ব্লু ওয়াটার নেভি যেই দেশই গঠন করতে পারবে সেই দেশেরই এখানে আধিপত্য থাকবে। ব্লু ওয়াটার নেভি নিজের দেশের জলভাগ অতিক্রম করে অন্যত্র গিয়েও যুদ্ধ করতে সক্ষম। 

২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী আমেরিকার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী এগারোটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে, এরপর চীনের কাছে তিনটি, ইউকের কাছে দুটি, জপানের কাছে দুটি এবং ভারতের কাছে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। তবে জাপানের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দুটির আয়তন খুবই কম এগুলো মূলত হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার। এফ ৩৫ বিমানের জন্য জাপান এগুলো আপগ্রেড করেছে। 

সম্প্রতি চীন তাদের তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ফুজিয়ান লঞ্চ করেছে, ৮০,০০০ টন ডিসপ্লেসমেন্ট যুক্ত ফুজিয়ান একটি সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। ভারতের কাছে থাকা দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও আইএনএস বিক্রান্ত ৪৫,০০০ টন ডিসপ্লেসমেন্ট যুক্ত যা চীনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের বিরুদ্ধে আকারে অনেকটাই ছোট। যার জন্য ভারতের তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিশালের ডিসপ্লেসমেন্ট হবে ৬৫,০০০ টন, এটি ২০৩০ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে যতদিনে আইএনএস বিশাল তৈরি হবে ততদিনে চীনের কাছে আরও বেশী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থাকবে। আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের নৌবাহিনীতে পাঁচটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থাকবে। চীন ইতিমধ্যেই চতুর্থ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করছে। চীনের গতির সাথে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়। 

চীনের নৌবাহিনী এখন সংখ্যার বিচারে আমেরিকার নৌবাহিনীর থেকেও এগিয়ে। আমেরিকা আগেই জানিয়েছে চীন বিশ্বের সামনে দেখায় তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ৩০০ বিলিয়ন ডলার কিন্তু বাস্তবে চীন ৭০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রতিবছর প্রতিরক্ষা খাতে। এই হিসাবে ২০৩৫-২০৪০ সালের মধ্যে আমেরিকা ও চীনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সংখ্যা সমান হয়ে যাবে কারন তত দিনে আমেরিকার বেশ কিছু এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অবসরে চলে যাবে। এই জন্য শক্তিশালী ব্লু ওয়াটার নেভি গঠনের জন্য এবং ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে প্রতিরোধের জন্য ভারত আরওবেশী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তৈরি করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *