ইউকের ব্যাঙ্ক থেকে একশো টন সোনা ভারত দেশে ফিরিয়ে আনছে

ইউকের ব্যাঙ্ক থেকে একশো টন সোনা ভারত দেশে ফিরিয়ে আনছে

সম্প্রতি জানা গেছে ভারত ইউকের ব্যাঙ্কে রাখা নিজেদের একশো মেট্রিক টন বা এক লাখ কেজি সোনা দেশে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিদেশে শুধু এই একশো টন সোনাই নেই, ভারতের আরও অন্তত ৪০০ মেট্রিক টন সোনা রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যা ধীরে ধীরে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এর ফলে ভারতের অনেক অর্থ বেঁচে যাবে। তাছাড়া এই ঘটনা ভারতের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থারও প্রমান। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বের সামনে এটা প্রমান করছে যে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী যে এবার আর বাইরের দেশের ব্যাঙ্ককে সোনা জমা রাখার প্রয়োজন নেই। এই যে একশো টন সোনা ভারত ইউকে থেকে নিয়ে আসছে এটা ইংরেজরা ভারত থেকে নিয়ে যায়নি বরং ভারতই ইউকের ব্যাঙ্কে রেখেছিল নিজের ইচ্ছেয়। যেমন কোনও ব্যক্তির কাছে যদি দুই কেজি সোনা থাকে তাহলে সে ওই সোনা নিরাপত্তার কারনে বাড়িতে রাখে না বরং কোনও ব্যাঙ্কের লকারে জমা রাখে। তবে ব্যাঙ্কের লকারে সোনা জমা রাখলে বছরে একরি নির্দিষ্ট অর্থ সেই ব্যাঙ্ককে দিতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই হিসেবই চলে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে বর্তমানে ৮২২.১০ মেট্রিক টন সোনা রয়েছে তবে এর মধ্যে ৩০৮.০৩ মেট্রিক টন সোনাই ভারতে থাকে, বাকী ৫১৪.০৭ মেট্রিক টন সোনা বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে রয়েছে। ভারত তার বিদেশে থাকা ৫১৪.০৭ মেট্রিক টন সোনার মধ্যে ১০০ মেট্রিক টন সোনা ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে নিরাপত্তার কারনে অনেক দেশই তাদের সোনা জমা রেখেছে বর্তমানে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে চার লাখ সোনার বার রয়েছে যার মূল্য ২০০ বিলিয়ন পাউন্ড। 

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের পর ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা মজুত রয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড তাদের ওয়েবসাইটে গর্বের সাথে লিখেছে আজ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনও সোনা চুরি হয়নি। তবে বিদেশি ব্যাঙ্কে সোনা জমা রাখা ঝুকিপূর্ন। যেমন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে জমা থাকা রাশিয়ার বৈদেশিক সঞ্চয় ও সোনা আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলি আটকে দেয়। যদি ভবিষ্যতে কোনওদিন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয় তাহলে সেরকম পরিস্থিতিতেও আমেরিকা ও ইউরোপীয়ান দেশ গুলো পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের সোনা আটকে দিতে পারে, এই জন্য ভারতের সোনা ভারতেই থাকা প্রয়োজন। আরবিআই তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার মধ্যেই সোনা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড সহ বিদেশী ব্যাঙ্কগুলিকে সোনা জমা রাখার জন্য ভারত প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন রুপিস দেয় সুতরাং সোনা দেশে এলে ব্যাপক পরিমান অর্থ সঞ্চয় হবে। 

আমেরিকা ও জি ৭ দেশগুলো রাশিয়ার সোনা আটকে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্বের বহু দেশই এবার বিদেশি ব্যাঙ্কগুলো থেকে তাদের সোনা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থার কারনে আরবিআই বাধ্য হয় সোনা বিদেশি ব্যাঙ্কে মোতায়েন করতে, সেসময় আরবিআইকে এর জন্য সমালোচনাও করা হয়েছিল অনেক। তবে বর্তমানে ভারত আর্থিকভাবে অনেক বেশী শক্তিশালী, এলআইসির মোট দাম পাকিস্তান, বাংলাদেশের জিডিপির থেকেও বেশী। এসবিআই সম্প্রতি রিলায়েন্সকে ছাড়িয়ে ভারতের সবচেয়ে লাভবান সংস্থায় পরিনত হয়েছে। সুতরাং ভারত এইজন্য সোনা দেশেই ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *