নিউজ ডেস্কঃ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে যুদ্ধবিমানকে অপারেট করার এক বিরাট সুবিধা আছে। যেসব অঞ্চলে যুদ্ধবিমান নিয়ে গিয়ে যুদ্ধবিমান করা সম্ভব না সেখানে খুব সহজেই তা করা যেতে পারে। তবে প্রথম দিকে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এতো সহজ ব্যাপার ছিলনা আর সেই কারনে প্রচুর দেশকে অনেক অসুবিধায় পরতে হত।
অ্যাভিয়েশনের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। আকাশে বিভিন্ন বিমান উড়েছে মানুষের চাহিদার কারনে। যখন মানুষের যেমন চাহিদা হয়েছে,পাল্টে গেছে বিমানের চরিত্র। আর এই করতে গিয়ে জন্ম হয়েছে অদ্ভুত ধরনের নতুন নতুন বিমানের। XFY POGO এর সাথে। এই যুদ্ধবিমানকে তৈরী করা হয়েছিল এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কিন্তু ক্যারিয়ার থেকে এটি মাত্র একটিই টেষ্ট ফ্লাইট করতে পেরেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে আমেরিকার আর্মি ও নৌবাহিনীর আওতাধীন হয়ে ভারটিক্যাল টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (VTOL) বিমান তৈরীর ওপর গবেষণা শুরু করে। এর প্রধান কারন ছিল যুদ্ধের সময় প্রশান্ত মহাসাগরে এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার তার ব্যাপক সুবিধা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই,এর সীমিত ধারন ক্ষমতা। তাই এমন একটি বিমান বানানোর দরকার ছিল, যাতে একই ক্যারিয়ারের দ্বিগুণ পরিমান বিমান বহন করা যায়। আর এখান থেকেই VTOL বিমানের ধারণা চলে আসে। এমন একটি বিমান,যাকে টেক অফ বা ল্যান্ডিং করানোর জন্য পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে রানওয়ে এর প্রয়োজন পরবে না। এগুলো একই জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এই বিমান তৈরী করতে গিয়ে অনেক অদ্ভুত ডিজাইন বাইরে এসেছিল। সফল VOTL বিমান, যেমন F-35B অথবা ইংল্যান্ডের সি হ্যারিয়ার(ভারতের হাতেই ছিল) বিমান। তবে কিভাবে কাজ করত যুদ্ধবিমানগুলি? তার প্রধান ইঞ্জিন কে নীচের দিকে ঘুরিয়ে থ্রাস্ট উৎপন্ন করে। ফলে বিমান ওপরে ওঠে,অথবা নীচে নামতে পারে।কিন্তু প্রারম্ভিক VOTL বিমান হিসাবে আমেরিকার নৌবাহিনী টেইল সিটার বিমান XFY POGO (ছবিতে)এর ডিজাইন বেছে নিয়েছিল।
এই বিমানটি ল্যান্ডিং হত তাদের পিছন দিক দিয়। অর্থাৎ বিমানের নোজ সর্বদা উপরে আকাশের দিকে থাকত। এটি রকেটের মতো সরাসরি ওপরে উঠত,আর ল্যান্ডিং এর সময় পিছন দিক করে সরাসরি নীচে নামত এবং চারটি কোয়াড ল্যান্ডিং গিয়ারের ওপর ল্যান্ডিং করত।
XFY POGO অদ্ভুত দর্শন বিমান ছিল। এর টার্বোপ্রোস ইঞ্জিন ছিল,এটি এর কন্ট্রা-রোটেটিং তিন ব্লেডে এর প্রোপেলার দিয়ে অত্যাধিক থ্রাস্ট সৃষ্টি করত, যা বিমানকে ওপর দিকে উঠিয়ে নিত। প্রোপেলার ব্লেডের মাঝে একটি জায়গা ছিল, যেখানে রাডার অ্যান্টেনা থাকত,যা দিয়ে শত্রুর বিমানকে ট্র্যাক করা যেত। POGO কে যে কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছিল,বিমানটি সেটাই করছিল। কিন্তু এর কিছু মারাত্মক ভুল ছিল।
এটিতে এয়ারব্রেক ছিল না,তাই দ্রুত গতিশীল হওয়ার পর, এটি ধীর গতিতে আসতে পারত না। আর এর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এর ল্যান্ডিং এ। পাইলটকে পিছন দিকে ল্যান্ডিং করতে হত। যা ছিল ব্যাপক স্কীলফুল কাজ। নতুন পাইলটরা এই কাজটি করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছিল। মূলত এই কারনটির জন্যই এই অদ্ভুত দর্শন বিমানটি বাতিল করা হয়েছিল।
টার্বোপ্রোপ বিমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকাশে রাজ করলেও,এর পর চলে আসা জেট ইঞ্জিন টেকনোলজি ,এই টার্বোপ্রোপ বিমানকে প্রাচীন করে দেয়। এক ম্যাক(১০০০কিমি/ঘণ্টা) এর কম গতিশীল টার্বোপ্রোপ ,কখনই জেট ফাইটারের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারত না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে XFY POGO এর মৃত্যু ঘটলেও,১৯৬০ এ হ্যারিয়ার এর মতো VOTL বিমান চলে এসেছিল।