শ্রীকৃষ্ণের কাছে দুটি জিনিস সবচেয়ে প্রিয় ছিল যেটা হল বাঁশি এবং রাধা। আর শ্রীকৃষ্ণের এই বাঁশির শব্দ শুনেই রাধা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চলে আসতেন আর এই কারনেই শ্রীকৃষ্ণ তার বাঁশিটিকে সব সময় নিজের কাছেই রাখতেন।তাই শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমের প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয় এই শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিটিকেই।
রাধারানীর মৃত্যু হয়েছিল নাকি হয়নি এবং মৃত্যু হলেও কিভাবে হয়েছিল এই নিয়ে রয়েছে নানান ধরনের মতামত।আর এই সব মতের মধ্যে একটি হল যে যখন শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে মামা কংস আমন্ত্রিত করেছিলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ রাধা থেকে প্রথমবারের জন্যে আলাদা হয়েছিলেন।শ্রীকৃষ্ণ যখন বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরা যাওয়ার আগে রাধার সাথে দেখাও করেছিলেন আর তাঁর মনে চলা সমস্ত কথাও খুলে বলেছিলেন তিনি রাধাকে এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে রাধার কাছেই ফিরে আসবেন।তারপর শ্রীকৃষ্ণ মথুরার দিকে রওনা দিয়েছিলেন।শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছেড়ে যাওয়ার পড়ে রাধার বর্ণনা খুব একটা পাওয়া যায় না।কিন্তু কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছেড়ে যাবার আগে রাধার সঙ্গে যখন শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল তখন রাধা বলেছিলেন যে যদিও শ্রীকৃষ্ণ তার কাছ থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছেন তবুও কৃষ্ণ তাঁর হৃদয়ে সর্বদাই বিরাজমান থাকবেন।
এরপরে শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গিয়ে তার মামা কংস ও অন্যান্য দানবদের হত্যা করেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণ সেখানকার প্রজাদের রক্ষা করার জন্য দ্বারকায় যান সেইখানে নিজ নগরী স্থাপন করেনএবং দ্বারকাধীস নামে জনপ্রিয় হন। শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছাড়ার পর রাধা আয়ান ঘোষের স্ত্রী হওয়ায় তার স্ত্রী ধর্ম নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।কিন্তু রাধার হৃদয়ে সবসময়ই কৃষ্ণের জন্যই সমর্পিত ছিল।
রাধারানীর স্ত্রী হিসাবে যা দায়িত্ব কর্তব্য ছিল সব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।এবং রাধারানীর সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর,তিনি শেষ বারের মতো কৃষ্ণর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন।কৃষ্ণর সাথে দেখা করতে গিয়ে তিনি দ্বারকায় পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি কৃষ্ণের রুক্মিনী ও সত্যভামার বিয়ের কথা শুনেছিলেন কিন্তু রাধারানী তাতে দুঃখিত ছিলেন না বরং খুশিই হয়েছিলেন।এবং কৃষ্ণও রাধাকে দ্বারকায় দেখে খুব খুশিও হয়েছিলেন।তবে কৃষ্ণের শহর দ্বারকাতে কেউ রাধাকে জানত না।এবং রাধার শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করায় শ্রীকৃষ্ণকে তাঁকে প্রাসাদে এক সেবিকা হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।
তারপর থেকেই রাধা সারা দিন প্রাসাদেই থাকতেন এবং প্রসাদ সম্পর্কিত নানারকম কাজগুলি দেখাশোনা করতেন।তবে প্রাসাদে রাধা আগের মতো কৃষ্ণের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ অনুভব করতে পারতেন না। তাই প্রাসাদ ভেবেছিলেন যে প্রাসাদ থেকে তিনি দূরে চলে গেলেই শ্রীকৃষ্ণের সাথে গভীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন। তাই রাধারানী প্রসাদ থেকে দূরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।তবে কোথায় যাচ্ছিলেন তা তিনি নিজে জানতেন না, কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন।রাধারানী যখন সম্পূর্ণ একাকী এবং দুর্বল হয়ে পড়েন তখন তার শেষ সময়ে তাঁর সামনে ভগবান কৃষ্ণ এসেছিলেন। তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে বলেন যেন রাধা তাঁর কাছে কিছু দাবি করেন তখন রাধা শ্রীকৃষ্ণ কে অনুরোধ করেন যে তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে বাঁশি বাজানো অবস্থায় দেখতে চান।তাই শ্রীকৃষ্ণ রাধা কথা রাখতে তিনি তার বাঁশি কে বের করেন এবং মধুর সংগীত বাজাতে শুরু করেন।তারপর থেকে কৃষ্ণ দিনরাত বাঁশি বাজাতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না রাধা তাঁর দেহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক রূপ ধারণ করে কৃষ্ণর সাথে বিলীন না হয়ে যান। বাঁশির শব্দ শুনে রাধা তার দেহকে ত্যাগ করে দেন।আর তাই রাধার মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে তাদের প্রেমের প্রতীকী হিসাবে বাঁশিটিকে ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।