আদৌ কি মৎস্য কন্যারা পৃথিবীতে আছে?

আদৌ কি মৎস্য কন্যারা পৃথিবীতে আছে?

নিউজ ডেস্কঃ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন রূপকথার গল্পে পড়ে এসেছি আমরা জলপরী বা  মৎস্যকন্যাদের কথা। একটি বা দুটি দেশ নয়! পৃথিবীর প্রায় সব দেশের গল্প ও উপকথাতেই বারবার উঠে এসেছে মৎস্যকন্যাদের কথা । আর সেই সমস্ত বর্ণনা থেকেই জানা যায় যে অপরূপ সুন্দরী এই মৎস্যকন্যারা অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক মাছ এর মত দেখতে । তাদের দেহের উপরের অংশ মানুষের মত নিচের অংশ মাছের মত হয় । জলপরী বা মারমেড নিয়ে অসংখ্য কার্টুন, অ্যানিমেশন মুভি ও তৈরি হয়েছে ছোটদের বিনোদনের জন্য । তবে এটি কি কেবলই বাচ্চাদের প্রিয় এক রূপকথার চরিত্র নাকি বাস্তবে সত্যিই অস্তিত্ব আছে মৎস্যকন্যাদের তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন ।

মৎস্যকন্যাদের গল্প বহু প্রাচীন কাল থেকেই শোনা যায় । প্রাচীন অ্যাসিরিও সভ্যতায় প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মৎস্যকন্যাদের কথা । জানা যায় অ্যাসিরিওদের পূজ্য দেবী অ্যাটারগেটিস ভুল করে তার বন্ধু এক মানুষকে হত্যা করে ফেললে সেই দুঃখে ও লজ্জায় দেবী থেকে তিনি পরিণত হন মৎস্যকন্যায় । এমনকি সে সময় গুহায়  আঁকা বিভিন্ন ছবিতেও বারবার মৎস্যকন্যাদের দেখা গেছে  ।

শুধু অ্যাসিরিও সভ্যতাই নয়, প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যেও বারবার উঠে এসেছে মৎস্যকন্যাদের কথা। তবে গ্রীকদের মতে মৎস্যকন্যা আসলে ছিল সাইরেন নামক এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। বিভিন্ন গ্রিক সাহিত্য থেকে জানা যায় সাইরেন নামক এই সামুদ্রিক প্রাণী অত্যন্ত সুন্দরী মৎস্যকন্যার আকার ধারণ করে খুব মিষ্টি গলায় গান গাইতে পারত। আর তাতেই আকর্ষিত হয়ে নাবিকরা দিক ভুল করে হারিয়ে যেত সমুদ্রে । আর তখনই এই সামুদ্রিক প্রাণী ডুবিয়ে ফেলত জাহাজ । এর ফলে হয় নাবিকরা মারা যেত আর না হলে বেঁচে থাকা মানুষদের সাইরেনরা সমুদ্রের তলায় থাকা প্রাসাদ পুরীতে নিয়ে যেত ।

এ তো গেল কেবল গল্প কথা। মৎস্যকন্যা সত্যিই দেখেছেন এমন দাবি করা অনেক মানুষের কথা ও ইতিহাসে বিভিন্ন সময় জানা যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথমেই নাম উঠে আসে বিখ্যাত নাবিক কলম্বাস এর। আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করে পৃথিবীর ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এই নাবিকের ডায়েরিতে উল্লেখ মিলেছে মৎস্যকন্যার কথা। তার ডায়রি অনুসারে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ পার করার সময় অর্ধেক মানুষ অর্ধেক মাছ এমন এক প্রাণী কে সমুদ্রতটে বসে থাকতে দেখেছেন তিনি। অনেকেই কলম্বাসের এই অভিজ্ঞতার কথা নিছকই গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ঠিকই তবে কলম্বাস কিন্তু একা নন।

১৮৪৭সালে একজন জেলেও দাবি করেন উপকূল থেকে কিছুটা দূরে তিনি এক মৎস্যকন্যার দেখা পেয়েছেন। তার বর্ণনা অনুসারে মৎস্যকন্যা তখন তার চুল আঁচড়ানোয় ব্যস্ত ছিল তবে যেই মুহূর্তে সে বুঝতে পারে কেউ তাকে দেখছে ,তৎক্ষণাৎ সে জলের মধ্যে পুনরায় ঝাঁপ দেয় ।

এমনকি সম্প্রতি কালেও মৎস্যকন্যা দেখা যাওয়ার ঘটনা পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গায় শোনা গেছে। ইসরাইলের কিরইয়াট ইয়াম অঞ্চলে দুই বন্ধু পাহাড়ের ওপর থেকে লক্ষ্য করে সমুদ্রের তীরের পাথরের ওপর মাছের মত দেখতে এক প্রাণীকে বসে থাকতে । অদ্ভুত এই প্রাণীটিকে দেখে তারা ভিডিও করতে শুরু করে কিন্তু তখনই মানুষের অস্তিত্ব বুঝতে পেরে সমুদ্রে লাফ দেয় প্রাণীটি। এমনকি ২০১৭ সালে দীঘার উপকূলেও মৎস্য কন্যা দেখা দেওয়ার কথা শোনা যায় ।

ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে মৎস্যকন্যা দেখা যাওয়ার নানা ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় । আর তার ওপর ভিত্তি করে বহু গল্প, মুভি প্রভৃতি ও তৈরি হয়েছে। অনেকে এটিকে নিছক গল্প কথা বলে উড়িয়ে দেয় ঠিক তবে অনেকে মনে করেন প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় বারবার যখন একই প্রাণীর উল্লেখ পাওয়া গেছে তখন তার মধ্যে সত্যতা কিছুটা হলেও আছে। এই মৎস্যকন্যা নিয়ে প্রশ্ন অনেক তবে এখনো তার উত্তর পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *