শরীরের রং বদলাতে সক্ষম যে সামুদ্রিক প্রাণীটি

শরীরের রং বদলাতে সক্ষম যে সামুদ্রিক প্রাণীটি

সমুদ্রের তলদেশ রহস্যে মোড়া। সমুদ্রের তলদেশে যে কত রহস্যময় প্রাণী বাস করে তা গুনে শেষ করা যাবেনা। শুধু যে রহস্যময় তাই নয়,এই প্রাণীদের স্বভাবও একে অপরের থেকে ভীষণ আলাদা ও অদ্ভুত। তবে গ্লাস অক্টোপাস এর মত চমকপ্রদ প্রাণী সমুদ্র খুব কমই আছে।চোখের নিমেষে অদৃশ্য হওয়ার এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে এদের।

কোনরকম ভাবে বিপদের সম্মুখীন হলে বা আক্রান্ত অনুভব করলে এরকম সহজেই নিজেদেরকে এমন ভাবে লুকিয়ে ফেলতে পারে যে দেখে মনে হয় অদৃশ্য হয়ে গেছে। শরীরের রং বদলাতে এরা দক্ষ।সাগরের তলদেশে বসবাস করা এই অদ্ভুত প্রাণীর খুব সহজেই বিভিন্ন পাথরের ফাঁকে লুকিয়ে ফেলতে পারে নিজেদেরকে শুধুমাত্র নিজেদের গায়ের রং পরিবর্তন করে। পাথর বা বালির সাথে এরা এত অদ্ভুত ভাবে মিশে যেতে পারে যে এদেরকে খুঁজে বের করা হয়ে ওঠে দুষ্কর।

শুধু তাই নয়,অনেক সময় অন্ধকারে নিজেদের দেহকে কালো রঙের পরিবর্তন করে ফেলতে পারে এরা।যার ফলে ,অন্ধকারে এদেরকে খুঁজে পাওয়া একদমই অসম্ভব। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে এলে শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে এরা এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে। শিকারিদের হাতথেকে নিজেদের লুকিয়ে ফেলার জন্য এরা এক বিশেষ ধরনের আলো সৃষ্টি করে। একে বায়োলুমিনিসেন্স বলছেন গবেষকরা। এর সাহায্যে খুব সহজেই শিকারিদের কাছে এক ধরনের বিভ্রম সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় এরা। আর শিকারি ভাবে শিকার অদৃশ্য হয়ে গেছে।

গ্লাস স্কুইডের ক্ষেত্রে গ্লাস পরিবারের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৬০ প্রজাতির স্কুইড রয়েছে। সমুদ্রের ২০০ থেকে ১০০০ মিটারের মধ্যে বসবাস করে এরা। গ্লাস স্কুইডের শরীর পুরোপুরি স্বচ্ছ, তবে এদের বড় চোখগুলো এদের সমস্যায় ফেলে।গভীর সমুদ্রে হাঙর জাতীয় শিকারী প্রাণীরা এদের সহজেই তাই দেখে ফেলে। এ জন্য গ্লাস স্কুইড তাদের লুকিয়ে ফেলার জন্য ভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে।

চোখের নীচে এক বিশেষ কৌশলে এরা আলো তৈরি করতে পারে যা দেখায় অনেকটা সূর্য থেকে আসা আলোর বিকিরণ এর মতই। এই আলো সৃষ্টির মাধ্যমে অদৃশ্য হয়ে সমুদ্রের 1600 ফুট গভীরে ও শিকারীদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয় এরা।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের গবেষণার মাধ্যমে বলেছেন এই ধরনের অক্টোপাস যে সত্যিই অদৃশ্য হয়ে যায় তা নয় বরং তারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে যে আলোর সৃষ্টি করে তা চারপাশের আলোর সাথে মিশে এক অদ্ভুত ভ্রমের সৃষ্টি করে যার ফলে মনে হয় যে চারিদিক থেকে আলো আসছে। আর এই সুযোগেই তারা আত্মগোপন করতে সক্ষম হয়।

তবে শুধু স্কুইড ই নয়, হাইপারইডস, সি স্যাফায়ার ইত্যাদি প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই ধরনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার একটা ক্ষমতা রয়েছে।আর এভাবেই তাদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তারা হয়ে উঠেছে সমুদ্রের অন্যতম এক বিস্ময়কর জীব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *