প্রতিবছর গড়ে ৫০ টি লাশ পাওয়া যায় পৃথিবীর যে বনটিতে

নিউজ ডেস্কঃ আমাদের চারপাশে এমন অনেক রহস্যময় জায়গা আছে যেগুলোর নাম শুনলে মনে ভয়ের সঞ্চার হতে বাধ্য। আর এই ধরনের জায়গা গুলো আমরা সাধারণত এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করি। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের আওকিগাহারাবন এরকমই একটি জায়গা। আত্মহত্যার বন নামেই বেশি পরিচিত এটি। এরকম ভয়ঙ্কর নাম কেন ভাবছেন নিশ্চয়ই? উত্তরটা শুনলে ভয়ে শিউরে উঠবেন নিঃসন্দেহে। জাপানের হনশু দ্বীপের  ফুজি পাহাড়ের পাদদেশে এই বনটি অবস্থিত। আর এই আওকিগাহারাবনের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে অসংখ্য লাশ। না হত্যা করা হয়নি তাদের কাউকে। জাপানে প্রত্যেক বছর বহু হতাশাগ্রস্ত মানুষ এই জঙ্গলে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রত্যেক বছর অন্তত ৫০ টি লাশ খুঁজে পাওয়া যায় এই জঙ্গল থেকে ।

প্রত্যেক বছর জঙ্গল সার্চ করলে পাওয়া যায় জঙ্গলের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল তাদের ব্যবহৃত জামা কাপড়, ঘড়ি,ব্যাগ ও তাদের পরিত্যক্ত গাড়ি। সেই  ১৯৭০ সাল থেকেই  প্রতি বছর  পুলিশ ,স্বেচ্ছাসেবক ও  সাংবাদিকদের সহায়তায় এই বন মৃতদেহের সন্ধানে সার্চ করা হয়। জানলে অবাক হবেন ২০০২ সালে এই বনে মৃতদেহ পাওয়া যায় ৭৮টি, ২০০৩ সালে ১০০টি এবং ২০০৪ সালে ১০৮টি। তবে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০১০ সালে  এই বনে আত্মহত্যা করেছেন ২৪৭ জন। কিন্তু এত জায়গা থাকতে আত্মহত্যার জন্য মানুষ এই বোনকেই কেন বেছে নেয় ?এই নিয়েই ওঠে প্রশ্ন

এই বনে আত্মহত্যার কারণ কী তা নিয়ে অনেক রকমের কাহিনী শুনতে পাওয়া যায় । স্থানীয়দের অনেকেই আওকিগাহারা বনকে এক ভয়ঙ্কর ভৌতিক জায়গা বলেই মনে করে থাকেন। তারা মনে করেন আগে এই বনে আত্মহত্যা করা ব্যক্তিদের অতৃপ্ত আত্মা এখনো সেখানে ঘুরে বেড়ায় এবং  কোন ব্যক্তি একা সেই জঙ্গলে গেলে অতৃপ্ত আত্মারা তাকেও আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। এ তো গেল কেবল গল্প কথা।

তবে, এই বনে এত লোকের আত্মহত্যার কারণ হিসাবে আর একটি বিশ্বাসযোগ্য কাহিনী শোনা যায়। তা হল ১৯৬০ সালে জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর ‘কুরোয় কাইজু’ নামক একটি উপন্যাস লেখেন। রোমান্টিক উপন্যাস টি জাপানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। উপন্যাসটির শেষে দেখা যায় আওকিগাহারা বনে এসে প্রেমিক ও প্রেমিকা দুজনে আত্মহত্যা করে। অনেকে মনে করেন প্রচন্ড খ্যাতি পাওয়া উপন্যাসটি পাঠকের মনে এক অদ্ভুত আবেগের সৃষ্টি করে আর তা থেকে তারাও ওই একটি বনটিকে আত্মহত্যা করার উপযুক্ত জায়গা হিসাবে মনে করে। আর এই কারণে জাপান সরকার জাপানে এই বইটি ব্যান করলেও, ১৯৯৩ সালে ‘দ্য কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল’ নামক আরেকটি বই প্রকাশিত হয়। আর তাতেই লেখক ওয়াতারু তসুরুমুইয় আত্মহত্যার সঠিক স্থান হিসাবে আওকিগাহারা বন এর কথা উল্লেখ করেন। ফলে আত্মহত্যার ঘটনা এই বনে ক্রমশ বাড়তেই থাকে।

এই সমস্ত কারণ ছাড়াও এই বনে আত্মহত্যা করার আরেকটি কারণও থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। এই বনটি খুবই ঘন গাছপালায় ঘেরা কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখানেই বন্য প্রাণীর বসবাস নেই বললেই চলে। ফলে পরিবেশ নির্জন হওয়ায় হতাশা গ্রস্থ মানুষদের আত্মহত্যার একটি প্রধান স্থান হয়ে উঠেছে এটি ।

২০১৬ সালে জাপান সরকার এই বনে আত্মহত্যার প্রবণতা কমানোর জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঠিকই তবে তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি এই বন কে কেন্দ্র করে রহস্যের জট খোলেনি এখনো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *