পিসিওডি এই সমস্যার সাথে পরিচিত এমন মানুষ বা প্রকৃতপক্ষে এমন মহিলা বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে খুব কম নজরে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাপন করার ধরনেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। ঠিক তেমনই আগে যেমন অনেক মাঠ, জমি দেখতে পাওয়া যেত এখন আর সেই পরিমাণে মাঠ বা জমি দেখতে পাওয়া যায় না। স্বাধীনতার আগের সময় এবং স্বাধীনতার পরে কিছুকাল ধরে যদি পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের আগের প্রজন্ম অর্থাৎ আমাদের মা কাকিমা, দিদা,ঠাকুমারা খোলা জায়গায় প্রকৃতির কোলে বড়ো হয়ে উঠেছে। তাদের শৈশবে প্রচুর খেলাধুলা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং ঘর কন্যার কাজের মাধ্যমে প্রচুর কাজও করেছেন যেটিকে ব্যায়ামের বিকল্প রূপ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
কিন্তু এখনকার মেয়েরা কেরিয়ার গড়ার উদ্দেশ্যে চাপ, পড়াশোনার চাপে, অথবা ফ্লাটে থাকার কারণে সেই রকমভাবে খেলার সময় ও জায়গা পায় না। সুতরাং এই নানান দিক মিলে যে বিরাট বড়ো জীবনযাপনের পরিবর্তন হয়েছে তারই ফলস্বরূপ পিসিওডি-কে চিহ্নিত করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক পিসিওডি কি? এই রোগের লক্ষণ গুলি কি কি? এর থেকে প্রতিকার কিভাবে মিলবে?
পিসিওএস এর সম্পূর্ণ নাম হলো পলিসিস্টিক অভারিয়ান ডিসিস। কিন্তু এই রোগের ঠিক কারণ অর্থাৎ ঠিক কি কারনে এই রোগটি হয় তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসকেরা এই বিষয়ে তাদের বিভিন্ন মতামত পোষণ করেছেন যে, যদি পরিবারে মা বা কোনো দিদির অথবা বোনের পিসিওডি থেকে থাকে তাহলে জেনেটিক গত দিক থেকেও এই রোগটি হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য হীনতার কারণেও এটি হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান যুগের জীবনযাত্রায় যে পরিমাণে পরিবর্তন এসেছে সেটিও একটি অন্যতম কারণ হতে পারে।
পিসিওডির রোগের লক্ষণ গুলি হল-
নিয়মিত ঋতুস্রাব না হওয়া। পরপর দুই তিন মাস বাদ দিয়ে তারপরে ঋতুস্রাব হওয়া।
অত্যাধিক পরিমাণে মোটা হয়ে যাওয়া অথবা অত্যাধিক পরিমাণে শুকিয়ে যাওয়া।
কানের পাশে বড়ো আকারের পশম সৃষ্টি হওয়া, হালকা গোঁফ সৃষ্টি হওয়া
ইত্যাদি লক্ষণগুলি দেখে সহজেই বোঝা যেতে পারে যে, একটি মহিলা পিসিওডি রোগে আক্রান্ত।
তবে চিকিৎসকদের মতে, এই রোগটি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা না যেতে পারলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পিসিওডিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কয়েকটি নিয়ম পালন করা অত্যন্ত আবশ্যক। যেমন-
বাইরের অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ফাস্টফুড এইসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
নিজের ওজন অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে তা পুরোটাই বর্জন করতে হবে।
যারা আমিষ ভোজী তারা খাদ্য তালিকায় মাছ, ডিম, মাংস, বেশি পরিমাণে সবজি, ডাল রাখতে পারেন। আর যারা নিরামিষ ভোজী তারা খাদ্য তালিকায় ডাল, বেশি পরিমাণে সবজির সাথে সোয়াবিন, পনির, দুধ রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন পনির যাতে খুব বেশি পরিমাণ না হয় কারণ পনিরের জন্য অনেক সময় ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে।
পিসিওডি-এর সাথে সাথে আর একটা প্রশ্ন আমাদের মাথায় চলে আসে। সেটা হল গর্ভধারণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পিসিওডি যে সমস্ত মহিলাদের রয়েছে তারা কি গর্ভধারণ করতে পারে? আর যদি গর্ভধারণ করতে পারেও তাহলে কোনো সমস্যা দেখা দেয় কি?
যে সমস্ত মহিলারা পিসিওডি রোগে ভুগছেন, তারা অবশ্যই গর্ভধারণ করতে সক্ষম। তবে গর্ভধারণের পর মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি পরিমাণে থাকে। আবার যে সমস্ত মহিলারা পিসিওডি রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেছেন এবং একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন পরবর্তী সময়ে তাদের বিভিন্ন রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা এইগুলি দেখা দিতে পারে।