ত্বকের সমস্যা মেটাতে ভিনেগারের ব্যবহার

উপরের লেখাটা পড়ে অবাক হলেন নিশ্চয়ই ?মাংস,স্যালাড সহ বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ও আচার তৈরিতে ভিনেগার ব্যবহার হয় এ কথা তো সবারই জানা । তবে তা দিয়ে ত্বকের যত্ন ?তা আবার হয় নাকি ?আজ্ঞে সত্যিই এটা সম্ভব !ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যায় খুব ভালো কাজ দেয় ভিনিগার ।

আসুন জেনে নেই ত্বকের কোন কোন সমস্যায় ব্যবহার করা যায় ভিনেগার ।

উজ্জ্বল ত্বক পেতে

উজ্জ্বল ত্বক কে না চায়?আর এই উজ্জ্বল ত্বক পেতে নামিদামি কোম্পানির নানা ক্রিমে কম টাকা খরচ করি না আমরা ।অথচ অনেক সময় ত্বকের যত্নে যথেষ্ট সময় না দিতে না পাওয়ার ফলে পাওয়া যায় না যথার্থ ফল ।এক্ষেত্রে ঘরে বসেই কোন বাড়তি সময় ছাড়াই শুধুমাত্র ভিনিগার ব্যবহার করেই উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারেন সহজে  ।

প্রত্যেকদিন স্নানের সময় উষ্ণ জলে  8 আউন্স অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সেই জলে স্নান করলে ভিনেগার ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল করে তোলে । দিনের মাত্র এই 15 মিনিট ভিনেগার মেশানো এই জলে চান করলে শরীরের পিএইচ লেভেল এর ভারসাম্য বজায় থাকে ফলে তা ত্বককে করে তোলে আর্দ্র ও উজ্জ্বল ।

ফেশিয়াল টোনার

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কিন্তু খুব ভালো ফেসিয়াল টোনার হিসাবে ও কাজ দেয় ।আর এই টোনার এর বিশেষত্ব হলো যেকোনো ধরনের স্কিনে খুব ভালো কাজ দেয় এটি ।বয়সের সাথে সাথে মুখের ত্বকের লোমকূপ বড় হয়ে যায় অনেকের।এক্ষেত্রে রোমকূপের খোলা মুখ বন্ধ করতেও এই টোনার অসাধারণ কাজ করে ।

প্রতিদিন দু কাপ জলের সাথে এক টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে তারপর একটু তুলো ঐ জলের মধ্যে ডুবিয়ে ভালো করে গোটা মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিতে হবে ।দেখবেন সাথে সাথে ভিনেগার ত্বকের মধ্যে মিলিয়ে যাবে। কয়েকদিন নিয়মিত ব্যবহার এ দেখবেন আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড ও অ্যাসেটিক অ্যাসিড ত্বকের রক্ত চলাচল করে তুলেছে স্বাভাবিক ফলে লোমকূপের খোলা মুখ বন্ধ হয়ে এসেছে অনেকটা ।

চুলের ডিপ ক্লিন  করতে

বর্তমানে চারপাশে দূষণের জন্য ত্বকের পর সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল ।শুধুমাত্র শ্যাম্পু করায ই চুলের সমস্ত ময়লা দূর করার জন্য অনেক সময় যথেষ্ট হয় না ।এক্ষেত্রে চুলের ডিপ ক্লিনজিং করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন ।এটি যে শুধুমাত্র চুলকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করবে তাই নয় নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ।

চুল পরিষ্কার রাখতে এক কাপ জলের সাথে 2 টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে স্নানের পরে ভেজা চুল আরেকবার ধুয়ে ফেলতে হবে ভালো করে ।এরপর আপনার পছন্দমত কন্ডিশনার চুলে এপ্লাই করে নিন ।প্রথম বারের ব্যবহারের পর থেকেই দেখতে পাবেন তফাৎ ।চুল হয়ে উঠবে অনেক বেশি সুস্থ ও নরম।

ত্বকের ট্যান ও কালো ছোপ  দূর করতে

রোদে বের হলে ট্যান পড়া খুবই সাধারণ একটি ঘটনা ।তবে একবার স্কিনে ট্যান পড়লে তা রিমুভ করা হয়ে ওঠে ভীষণ কঠিন।এক্ষেত্রে পরিষ্কার উজ্জ্বল ত্বক পেতে নিয়মিত ব্যবহার করা শুরু করুন ভিনেগারের ।

প্রতিদিন চার কাপ জলের সাথে আধ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ওই মিশ্রন ট্যান পরা অংশে লাগাতে হবে ।নিয়মিত ব্যবহারে দেখবেন শুধু যে ত্বকের কালো ভাব দূর হয়েছে তাই নয় ত্বক হয়ে উঠেছে আগের থেকে অনেক বেশি সুস্থ ।

খুশকি দূর করতে

খুশকির সমস্যায় আমরা সকলেই কমবেশি ভুগি।বিশেষত শীতকালে খুশকির সমস্যা যেন আরো বেশি বেড়ে যায় ।খুশকির হাত থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করা শুরু করুন ভিনেগার ।

খুশকির হাত থেকে রক্ষা পেতে শ্যাম্পুর সাথে এক টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে তা দিয়ে চুল ধুতে পারেন ।অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এ থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান আপনার স্ক্যাল্পের  খুশকি দূর করবে সেই সাথে পিএইচ লেভেলের ব্যালেন্স ও রক্ষা করবে ।চুল হয়ে উঠবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ।তবে শ্যাম্পুর সাথে ভিনেগার একসাথে মেশাতে না চাইলে শ্যাম্পু করার আগে সমপরিমাণ জল ও ভিনেগার মিশিয়ে তা সরাসরি স্ক্যাল্পে অ্যাপ্লাই করে তারপরেও শ্যাম্পু করতে পারেন। ফল একই মিলবে ।

কালশিটে  দাগ দূর করে

ত্বকে আঘাত লাগলে বা হঠাৎ ধাক্কা খেলে অনেক সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেঁধে  যায় ও কালো হয়ে ওঠে সেটা ।এটি দেখতে যেমন লাগে বাজে তেমন ব্যথার ও সৃষ্টি করে ।কালশিটে দাগ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার ।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কিছুটা তুলোর মধ্যে লাগিয়ে ত্বকের যে অংশে কালসিটে পড়েছে সেখানে এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখলে দেখবেন কালশিটে দাগ ক্রমশ হালকা হয়ে এসেছে ।জানলে অবাক হবেন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার আছে বেশকিছু অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের কোনো আঘাত কমাতে সাহায্য করে ।

পোকামাকড়ের কামড় উপশম

অনেক সময় নানা পোকা-মাকড়ের কামড়ে ত্বকে জ্বালা-যন্ত্রণা দেখা যায় অনেক সময়। আবার এই পোকামাকড়ের কামড় থেকে ত্বকে হতে পারে ঘা ও ।এক্ষেত্রে কোনো পোকামাকড় কামড়ালে সাথে সাথে ব্যবহার করুন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ।

তুলো দিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার সাথে সাথে আক্রান্ত স্থানে লাগালে পরিত্রান পাওয়া যায়  ।অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি ত্বকের যেকোনো রকম সংক্রমণ চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে অনেকটা সাহায্য করে ।

পায়ের দুর্গন্ধ দূর করে

পা ঢাকা জুতা পরলে অনেকেরই পায়ে বাজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় বিশেষত তা যদি গরমকাল হয় ।পায়ের দুর্গন্ধের মূল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস ।

এক্ষেত্রে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি পাত্রে চার কাপ জল এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে 15 মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন তাতে ।এরপর পা ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে দেখবেন কামাল ।অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এ থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদানগুলি পায়ের যে কোন ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস যেমন দূর করবে তেমনি পায়ের ত্বককে করে তুলবে নরম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *