চুলের কঠিন সমস্যা মেটাতে চা এর ব্যবহার

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খবর কাগজ এর সাথেই হোক বা বিকেলে আড্ডার মাঝে !চায়ের সাথে আমাদের এক আলাদাই ইমোশন জড়িয়ে আছে!চা ছাড়া দিনের শুরুটাই যেন হয় না ঠিকমতো !দুধ চা শরীরের জন্য তেমন ভালো না ঠিক ই তবে  লিকার চা এর যে বেশ কিছু গুনাগুন আছে একথা আমরা অনেকেই জানি।তবে জানেন কি চা কিন্তু কেবল খেতেই ভালো নয় !আমাদের ত্বকের জন্যও এটি খুবই উপকারী ।চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি এজিং,অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গুলি আমাদের ত্বককে রাখে সুস্থ ও সুন্দর ।এছাড়াও চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও কিন্তু ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় খুব ভালো মতো কাজ দেয়।আসুন জেনে নিই শুধুমাত্র খাওয়া ছাড়াও আরো কি কিভাবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা‌য় ব্যবহার করা যেতে পারে চা ।

চোখের ফলা ভাব ও ডার্ক সার্কল দূর করতে

আমাদের বর্তমানের কর্মব্যস্ত জীবনে প্রায়ই অভাব দেখা যায় ঘুমানোর মতো সময়ের।আর এই বিশ্রামের অভাব থেকেই অনেক সময় চোখের নিচে দেখা যায় ডার্ক সার্কেল ।এছাড়াও চোখ এর আশেপাশে ফোলা ভাব ও লক্ষ্য করা যায় অনেকের ।আপনিও যদি এই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকেন তাহলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন চা ।চায়ে ক্যাফেইন ও ট্যানিন নামক দুই উপাদান থাকে ।এগুলি চোখের ফলা ভাব যেমন কমায় তেমনি দূর করে ডার্ক সার্কল ও।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই একটি টি ব্যাগ জলে ভিজিয়ে নিন। এরপর চোখের ওপরে 5 থেকে 10 মিনিট ধরে রাখুন সেটি ।নিয়মিত এই টি ব্যাগ ব্যবহার করতে থাকলে দেখবেন কদিন পরেই চোখের নীচের যাবতীয় ডার্ক সার্কেল ও ফোলা ভাব দূর হয়ে গেছে ।

সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি এবং দূষণ এই দুই-ই আমাদের ত্বকের জন্য খুব খারাপ ।অনেক নামি দামি সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরেও অনেক সময় ত্বকে সানবার্ন দেখা যায় ।এই সানবার্ন বা ট্যান কিন্তু খুব সহজেই ব্যাবহার করে নিরাময় করতে পারেন আপনি চা ব্যবহার করে।

একটি বাটিতে অল্প একটু চা প্রথমে জলে ফুটিয়ে নিন ।এরপর তা ঠান্ডা হয়ে এলে একটি কাপড় তাতে ডুবিয়ে নিয়ে ট্যান পড়া অংশে লাগিয়ে রাখুন ।নিয়মিত ব্যবহারে মিলবে ফল।এছাড়াও গরমের ফলে ত্বকে জ্বালা ভাব দেখা দিলে তাও কমাতে ত্বকে সরাসরি টি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন ।

চা ত্বকে খুব ভালো টনিক হিসাবেও কাজ দেয় ।বিশেষত আপনার যদি অয়েলি স্কিন হয়ে থাকে তাহলে ব্রন সহ অয়েলি স্কিনের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন এটি ।বিশ্বাস হচ্ছে না ?কয়েকদিন আপনার সাধারণ টোনার ব্যবহার না করে তার বদলে চা ব্যবহার করে ফল দেখুন নিজের চোখে ।

প্রথমেই ভালো করে জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন ।এরপর একটি টি ব্যাগ জলে ডুবিয়ে তা ভালো করে গোটা মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন । দেখবেন মুখের অতিরিক্ত অয়েল উধাও হয়ে যাবে।

চা ফেস স্ক্রাব হিসেবেও খুব ভালো কাজ দেয়।ব্যবহার হয়ে যাওয়া টি ব্যাগ গুলি ফেলে না দিয়ে তা কিন্তু স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন আপনি ।

প্রথমে টি-ব্যাগ গুলি শুকিয়ে নিন রোদে ।তারপর নিয়মিত স্ক্রাবার হিসেবে মুখে ব্যবহার করতে শুরু করুন এটি ।দেখবেন কয়েক দিনেই মুখ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও নরম ।

চা ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে পারে একথা তো আগেই বলা হলো। তবে,সমস্ত রকম চায়ের মধ্যে একনে সমস্যায় সবথেকে ভালো কাজ করে জেসমিন টি ।এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি দ্রুততার সাথে ত্বক থেকে যেকোন রকম পিম্পল এর দাগ সহজে দূর করতে পারে।

নিয়মিত অল্প পরিমাণে জেসমিন টি ভালো করে জলে ফুটিয়ে তা ঠাণ্ডা করে তৈলাক্ত ত্বকের ওপর লাগালে দূর হয় ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং সেই সঙ্গে ত্বকের পিএইচ লেভেল এর ভারসাম্য বজায় থাকে ।ফলে ব্রনোর সমস্যা মিটে যায় অনেকটাই।

ত্বক মসৃণ করতে

বয়সের সাথে সাথে ত্বকে রুক্ষতা ও শুষ্কতা দেখা যায়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে অমসৃণ  আর এই অমসৃণ ত্বকে দেখা যায় নানা দাগ। এক্ষেত্রে  চামোমাইল চা বিশেষ উপকারী শুষ্ক ত্বকের জন্য ।এটি নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা ও রুক্ষতা উধাও হয়ে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসে এক মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক ।

মুখের দাগ পরিষ্কার করতে

মুখ এর দাগ পরিষ্কার করতে চা পাতা বেটে মাস্ক হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন তা মুখে ।উজ্জল ও দাগ বিহীন ত্বক পেতে চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশ সাহায্য করে ।চা ফোটানোর পর পড়ে থাকা চা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে তা মাস্ক হিসাবে মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে কয়েকবার এটি ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে দেখতে পাবেন তফাৎ ।তবে,এক্ষেত্রে সাদা চা সব থেকে বেশি কার্যকরী ।

ফাটা ঠোঁট দূর করে

ফাটা ঠোঁট এর সমস্যা আমাদের প্রায় সারা বছরই ভোগার। এর মূল কারণ হলো ত্বকের তার স্বাভাবিক আদ্রতা হারিয়ে ফেলা।রোজ গ্রিন টি খাওয়া যদি আপনার অভ্যাস হয়ে থাকে তবে এই গ্রিন টি কিন্তু আপনার ফাটা ঠোঁটের আদ্রতা ফিরিয়ে আনার জন্য ও ব্যবহার করতে পারেন আপনি  ।একটি গ্রিন টি ব্যাগ উষ্ণ গরম জলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে তা ফাটা ঠোঁটে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন কয়েকদিনেই দেখবেন ঠোঁট হয়ে উঠেছে নরম ও গোলাপী।

চুল স্বাস্থ্যকর করে তোলে

চুল পড়ার সমস্যায় ভুক্তভোগী হয়ে থাকলে এবার থেকে লিকার চা ব্যবহার করে দেখুন ।প্রত্যেকদিন চা বানানোর সময় একটু বেশি পরিমাণে লিকার চা বানিয়ে ফেলুন এরপর চুল পড়া রোধ করতে  লিকার চা কিছুক্ষন ঠাণ্ডা হতে দিন ।তারপর সেটি চুল এবং কিছুটা স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন।দেখবেন চুলপড়া যে কেবল কমবে তাই নয় সাথে চুল ও হয়ে উঠবে মজবুত ও উজ্জ্বল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *