নেতাজির জন্মদিনে কেন বিনাপয়সায় তেলেভাজা বিলি করা হয়?

নেতাজির জন্মদিনে কেন বিনাপয়সায় তেলেভাজা বিলি করা হয়?

বাঙ্গালীদের আবেগ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে এক অনন্য নাম হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। যখন ইংরেজদের অত্যাচারে ওষ্ঠাগত গোটা ভারত তখন সকল দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে ও দেশকে স্বাধীন করতে এগিয়ে আসলেন সুভাষচন্দ্র বসু। কিভাবে নিজেদের দেশকে স্বাধীন করা যায় সেই কৌশল অর্থে শুরু করলেন দেশেরই একাংশ বীর বিপ্লবীদের সঙ্গে। তৈরি করলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। নেতাজির ছত্রছায়ায় দেশ স্বাধীনতার লড়াইয়ে শুধু ছেলেরাই নয় পাল্লা দিয়ে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছিল মেয়ে এবং বউয়েরাও। ইংরেজদের আড়ালে তাদেরই বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্দোলনের মিটিং বস্তু কলকাতার কিছু কিছু ডেরায়। সেই সমস্ত ডেরায় বীর বিপ্লবীদের সন্ধ্যাভোজ অর্থাৎ টিফিন পৌঁছে দিতেন আর একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা দেশপ্রেমিক খেঁদু সাউ নামের একজন ভদ্রলোক।

কিন্তু কে এই ভদ্রলোক কি অবদান রয়েছে তার স্বাধীনতা সংগ্রামে! নেতাজির জন্মদিনে কেনই বা বিনাপয়সায় তেলেভাজা বিলি করতেন এই ভদ্রলোক! প্রশ্ন উঠে আসছে সকলের মনে।

তাহলে খেঁদু সাউয়ের বিষয়ে একটু পরিষ্কারভাবেই বলা যাক। মূলত বিহারের বাসিন্দা ছিলেন খেঁদু সাউ। স্বাধীনতার বহু আগে অর্থাৎ ১৯১৮ সালে স্বপরিবারে প্রথমে হাওড়ায়, তারপর কলকাতায় চলে এসেছিলেন তিনি। তখনকার সময়ের বিখ্যাত রূপবাণী সিনেমা হলের সামনে নিজের রান্নার জাদু দিয়ে খুলেছিলেন একটি ছোট্ট তেলে ভাজার দোকান। যেখানে পাওয়া যেত খবরের কাগজ চপ, বেগুনি, ফুলুরি সহ নানাবিধ খাদ্য।‌ খুব অল্প দিনের মধ্যেই তার রান্নার স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছিল ওটা কলকাতায়। বিখ্যাত তেলেভাজার দোকান হিসাবে নাম করে গিয়েছিলো তার লক্ষ্মী নারায়ণ সাউ এন্ড সন্স তেলেভাজার দোকানটি।

পরবর্তীতে দোকান চালানোর পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বৈঠকের ডেরায় পৌঁছে দিতেন চপ, তেলেভাজা ও মুড়ি। সংগ্রামীদের দরজায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সংগ্রামের গল্প শুনে উদ্ভূত হয়ে উঠেছিলেন খেঁদু সাউ নিজেও। এরপর একদিন বিপ্লবীদের দেড়ায় তেলেভাজা পৌঁছাতে গিয়ে সাক্ষাৎ হয়েছিল স্বয়ং নেতাজীর সঙ্গে। সুভাষচন্দ্রের মধ্যে জ্বলে ওঠা বিপ্লবের আগুন দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন খেঁদু সাউ যে তিনি নিজের দোকানেই বানিয়ে ফেলেছিলেন আন্দোলনের এপিসেন্টার।

এরপর দোকানে তেলেভাজা খেতে আসার অছিলায় বিপ্লবীরা গোপন তথ্য জানিয়ে যেতেন ভদ্রলোককে। সেই তথ্য পৌঁছে দিতেন নির্দিষ্ট জায়গায়। ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে চলা স্বাধীনতার এই সংগ্রামে বহু মানুষ কলকাতা ত্যাগ করলেও নিজের দোকান নিয়ে অনড় ছিলেন খেঁদু সাউ।

১৯১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই দোকানের পথে চলা ২০২৩ সালেও চলছে একই রকম। স্বাধীনতার আগে এই দোকানের তেলেভাজা যেরকম সাধ ছিল স্বাধীনতার শত বছর পরেও ভাজার সেই একই রকম স্বাদ বজায় রেখেছে দোকানের বংশধররা। ১৫৮ বিধান সরণীর লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স ২০২৩ সালে পা দিয়েছে ১০৩ বছরে। কিন্তু ১৯৪১ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অন্তর ধানে চলে যাওয়ার পর ১৯৪২ সাল থেকে নেতাজির জন্মদিনে অর্থাৎ ২৩ শে জানুয়ারি প্রত্যেক বছর বিনা পয়সায় দেওয়া হয় তেলেভাজা। আজ হয়তো দোকানের মালিক খেঁদু সাউ জীবিত নেই কিন্তু তার নাতি কেষ্ট কুমার গুপ্ত(সাউ) ও প্রপৌত্র সুধাংশু গুপ্ত (সাউ) আজীবন এই দোকানের পরম্পরা একই থাকবে বলেই আশ্বস্ত করেছেন সকলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *