পৃথিবীর সবথেকে ছোট প্রজাতির মানুষ

নিউজ ডেস্কঃ নানা জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির অপরূপ মেলবন্ধন দেখা যায় আফ্রিকা মহাদেশে। আফ্রিকা মহাদেশের গোটাটাই এক আশ্চর্যের মোড়া। আর আফ্রিকার এরকমই এক আশ্চর্য হলো এখানকার পিগমি মানব জাতি। তবে বর্তমানে শিকারের অভাব গণযুদ্ধ প্রভৃতির কারণে এই পিগমি সভ্যতার অনেকটাই বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে এখনো প্রকৃতির সাথে সংঘর্ষ করে কঙ্গোর গভীর বনাঞ্চলে পিগমি সম্প্রদায় বসবাস করে। সভ্য সমাজের কাছে পিগমিরা সাধারণত নিম্নস্তরের মানব হিসেবে পরিচিত। এই পিগমি শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে যার অর্থ হলো “কনুই পর্যন্ত”।এক্ষেত্রে উল্লেখ্য এই পিগমি সম্প্রদায়ের মানুষ ই কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে খাটো  মানব জাতি হিসাবে পরিচিত। গড়ে সাধারণত চার ফুট উচ্চতা হয় এই জাতির মানুষদের। এরা নিজেদের কে “বা” নামে সম্বোধন করে যার অর্থ হল “মানুষ”। কঙ্গো, ক্যামেরুনে পিগমিদের বেশ কয়েকটি উপজাতি বসবাস করে। এছাড়াও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ নিউগিনিতে ও কিছু পিগমি বাস করে। তবে দুঃখের ব্যাপার বর্তমানে গোটা বিশ্বে জাতির মানুষের সংখ্যা এক লক্ষেরও কম। তাদের মধ্যে 30 থেকে 40 হাজার শুধুমাত্র কঙ্গোতে বসবাস করেন।

এই পিগমিরা সাধারণত শান্তিপ্রিয় হয় এবং যুদ্ধ শব্দটি তাদের অভিধানে নেই বলা চলে। প্রার্থনা,আনন্দ বা দুঃখ এর সমস্ত কিছুর বহিঃপ্রকাশ তারা তার বিভিন্ন রকমের নাচের মাধ্যমে করে থাকে। এই পিগমিরা যাযাবর জাতি এবং বনাঞ্চলের দলবেঁধে তারা ঘুরে বেড়ায় এবং স্বল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান  তৈরি করে। এরা সাধারণত বুনোফল এবং মধু সংগ্রহ করে জীবন যাপন করে এছাড়াও বিভিন্ন বন্যপ্রাণী তারা স্বীকার করে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রতিটি পিগমি দলের দলপ্রধান সমস্ত কিছু ঠিক করেন। শিকারে যাওয়ার আগে দলপ্রধান বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণ করে বিভিন্ন অমঙ্গলের বিরুদ্ধে দেবতাদের কাছে প্রার্থনা করেন। পিগমি নারী ও পুরুষ উভয়েই শিকারে এতোটাই পটু হয় যে দূর থেকে তারা শিকারের গন্ধ পায় এমনকি পায়ের চিহ্ন দেখে তারা বুঝতে পারে কোন পশুর চিহ্ন এবং তা কত বছর বয়সী।

নৃতাত্ত্বিক গবেষকদের মতে মানব সভ্যতার প্রথম ধাপের জলজ্যান্ত নিদর্শন পিগমিরা। সভ্যতার আলো না দেখা প্রজাতির মানুষদের জীবন যাপন অনেকটা লক্ষ্য শতক আগে মানব সমাজের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে। তবে বর্তমানে পিগমি জাতির এই ধ্বংসের মূল কারন কিন্তু এই আমরাই, তথাকথিত সভ্য মানুষেরা। আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের বনভূমি কাঠের জন্য কেটে সাফ করার ফলে পরোক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পিগমিরা এবং তাদের বাসযোগ্য ভূমি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে । কমে যাচ্ছে শিকারের পরিমাণ । এরফলে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে এই জাতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *