নিউজ ডেস্কঃ কচ্ছপ একধরনের সরীসৃপ প্রানী যারা জল এবং ডাঙা দুই জায়গাতেই বাস করে। এদের শরীরের উপরিভাগ শক্ত খোলসে আবৃত থাকে যা তাদের শরীরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রক্ষা করে। কচ্ছপ পৃথিবীতে এখনও বর্তমান এমন প্রাচীন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে কচ্ছপের প্রায় ৩০০ প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি মারাত্মক ভাবে বিলুপ্তির পথে রয়েছে। কচ্ছপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে পারে, সাধারণত এ ধরনের প্রাণীদের ঠান্ডা-রক্তের প্রাণী বলে অভিহিত করা হয়। অন্যান্য প্রাণীর মত এরা নিশ্বাস গ্রহণ করে। কচ্ছপের অনেক প্রজাতি জলে বা জলের আশেপাশে বাস করলেও এরা ডাঙায় ডিম ছাড়ে। এদের দেহ খোলসদ্বারা আবৃত থাকে। খোলসের উপরের অংশকে Carapace(ক্যারাপেস) এবং নিচের অংশকে Plastron(প্লাসট্রন )বলে।এরা কয়েক সে.মি. থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। এরা সাধারণত দিবাচর প্রাণী তবে তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে তারা গোধূলীতেও সক্রিয় হয়ে থাকে। তারা সাধারণত দলবদ্ধ প্রাণী নয় এবং একাকি জীবন যাপন করে থাকে।
কচ্ছপকে বলা হয় দীর্ঘজীবী প্রাণী। দুনিয়ার দীর্ঘজীবী প্রাণীদের তালিকায় এই কচ্ছপ আছে সেরা পাঁচের মধ্যে। গ্যালাপাগোস জায়ান্ট টরটয়েজ প্রজাতির কচ্ছপ বাঁচে গড়ে ১৯০ বছর! দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপের জনাথন নামের কচ্ছপের বয়স ১৮৫ বছর! আর বেসরকারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি বয়সী কচ্ছপটির বয়স ছিল ২৫৬! ২০০৬ সালে সেটি জীবনের ম্যারাথনে ইস্তফা দিয়ে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে।
কিন্তু কচ্ছপ কেন এত বছর বাঁচে? প্রশ্নটা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তর মিলেছে, তবে এখনো রয়ে গেছে অনেক রহস্য।
ঈশপের সেই গল্পটা কে না জানে! খরগোশ আর কচ্ছপ একদিন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামল। কচ্ছপের ধীরগতির ‘সুনাম’ থাকায় খরগোশ পথে খানিকটা জিরিয়ে নিল। একসময় ঘুমিয়েও পড়ল। আর সেই সুযোগে ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ কচ্ছপই ছুঁয়ে ফেল টাচ লাইন। খরগোশের যখন ঘুম ভাঙল, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গবেষকেরা দেখেছেন, দৈত্যাকার কচ্ছপের (জায়ান্ট টরটয়েজ) বিপাক প্রক্রিয়া খুব ধীরগতির। তার মানে এদের শক্তিও ক্ষয় হয় অতি ধীরে। ১৯০৮ সালে জার্মান শারীরবৃত্তবিদ ম্যাক্স রাবনার প্রাণীর আয়ু নিয়ে একটা সূত্র উপস্থাপন করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, প্রাণীর বিপাক প্রক্রিয়া যত দ্রুত, তার আয়ু তত কম। এই সূত্রে আস্থা রাখেনি অনেকেই।
ম্যাক্স রাবনারের সূত্র অনেকে না মানলেও কিছু বিজ্ঞানী অবশ্য রাবনারের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, প্রাণিদেহের মৌলিক কিছু উপাদান (যেগুলো কোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী) ও স্থিতিহীন অণুর (যেগুলো শরীরে শক্তি জোগায়) সঙ্গে বিপাক প্রক্রিয়ার সম্পর্ক আছে। এই সূত্র ধরে এগোলে কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর একটা সমাধান অবশ্য মেলে। ধীর বিপাক প্রক্রিয়ার কারণে কচ্ছপের শক্তি খরচ হয় কম। আর এ কারণে কোষের মৃত্যুর হারও যায় কমে।
এছাড়াও আরও যুক্তি আছে। কচ্ছপের সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী।যা তাদের প্রতিকূলতা থেকে বাঁচায়। দৈত্যাকার কচ্ছপগুলোর আবাস এমন সব জায়গায়, যেখানে সাধারণত মানুষের আনাগোনা খুব কম। ফলে এদের জীবনের ঝুঁকিও নেই বললেই চলে।
দুঃসংবাদ যে,এই প্রাণীটিও এখন মারা পড়ছে অবাধে। কচ্ছপ পাচার এখন এক ভয়াবহ ইকার ধারণ করেছে। এক ধরনের শিকারী ও পাচারকারীদের টার্গেটে পড়ে প্রাণীটি বিলুপ্ত হতে চলে চলেছে বিরল প্রজাতির এই কচ্ছপ।