লালচে বাদামী লোমযুক্ত চিত্রা হরিণ সম্ভবত উপমহাদেশীয় হরিণ প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন। এদের (ইংরেজি: chital বা cheetal) নামটি এসেছে বাংলা চিত্রা বা চিত্রল থেকে যার অর্থ ফোঁটা বা ছোপযুক্ত। ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের বনাঞ্চলগুলো চিত্রা হরিণের স্থায়ী আবাসস্থল। এছাড়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিত্রা হরিণ রয়েছে।
এদের গলার নীচে, পেট, লেজের নিচে ও চার পায়ের ভেতরের চামড়ার বর্ণ সাদা। হাঁটু থেকে পায়ের খুর অবধি হাল্কা সাদা বা ধুসর রং রয়েছে।এদের কাঁধ বরাবর একটি গাঢ় রেখা পিঠ দিয়ে লেজ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। পুরুষ হরিণের রেখাটি অধিক দৃশ্যমান আর গাঢ় হয়।পুরুষ হরিণের ঘাড় সরু ও বুক তুলনামূলক স্ফীত থাকে। পুরুষ হরিণের মুখে গাঢ় চিহ্ন থাকে যা দ্বারা এদের বয়সও নির্ধারণ করা যায়।
পূর্ণবয়স্ক চিত্রা হরিণের কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৮ ইঞ্চি হয়। দেহ লম্বায় ৪২ থেকে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। লেজের দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। ওজন ৭৫ থেকে ১০০ কেজি (১৬৫ থেকে ২২০ পাউণ্ড) পর্যন্ত হয়। পুরুষ হরিণের উচ্চতা ও ওজন স্ত্রী হরিণের চেয়ে বেশি হয়।স্ত্রী হরিণ ১৪-১৭ মাসে (কারো কারো মতে ১০ মাসে) বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। অপরদিকে পুরুষ হরিণ ১৪ মাসে বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।
কেবলমাত্র পুরুষ হরিণের শিং থাকে। সাধারণ শিঙের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৭ ইঞ্চি হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ৭৫ ইঞ্চি (প্রায় আড়াই ফুট) পর্যন্তও হয়। হরিণের শিং অনেকসময় পড়ে যায় আর আবার গজায়। বয়স এবং খাদ্যের উপরও শিং বেশি দিন থাকা বা পড়ে যাওয়া বা লম্বা হওয়া নির্ভর করে।
ঘাস, গুল্ম আর গাছের পাতা চিত্রা হরিণের প্রধান খাদ্য। গাছের বাকল ও মূলও এরা খায়। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ মূলত কেওড়া, বাইন, গেওয়া, ওড়া, গরান, এবং কাঁকড়া গাছের ছোট চারা ও কচি পাতা এমনকি ছাল (বাকল) খেয়ে থাকে।চিত্রা হরিণ খুব ভাল পোষ মানে। পোষা হরিণ বিভিন্ন ধরনের সব্জী খেয়ে থাকে।
মনোমুগ্ধকর এদের দৈহিক গড়ন ও মায়াবী চাহনি। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বিভিন্ন কারণে চিত্রা হরিণের অবস্থা বর্তমানে ভাল নেই।
এক সময় প্রায় সকল বনে এদের অবাধ বিচরণ ছিল। এখন নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চিত্রা হরিণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে।
বনভূমি উজাড় ও অবৈধ শিকার চিত্রা হরিণের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তাই বনভূমি সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে চিত্রা হরিণ রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই হরিণ রক্ষা পাবে এবং পরিবেশ ভাল থাকবে।