নিউজ ডেস্কঃ কিছুদিন আগেই ভারতের হাতে অত্যাধুনিক রাফালে এসে পৌঁছেছে। মত ৩৬ টি রাফালে থাকবে ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে। তবে জানেন কি ভারতের হাতে এই যুদ্ধবিমান এসে পৌঁছানো এতো সোজা ছিলনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতেরে সেনাবাহিনী এই যুদ্ধবিমান পেয়েছে।
রাফালে ক্রয় করার পেছনে কি কারন ছিল জানেন?
ভারতকে তার দুই অসৎ প্রতিবেশি (চীন ও পাকিস্তান) একত্রে ভালোভাবে জবাব দেওয়ার জন্য বায়ুসেনার কাছে বিয়াল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ স্কোয়াড্রন (এক স্কোয়াড্রন = ১৮ টি ফাইটার) জেটের প্রয়োজন ছিল।
২০০১ এ ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে স্কোয়াড্রন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৩৯.৫ এ নেমে দাঁড়িয়েছিল। স্কোয়াড্রন পূরণ করতে,তাদের সে সময় আরো প্রায় ১০০ টি যুদ্ধবিমানের এর প্রয়োজন ছিল। ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের এই অভাবের কথা তৎকালীন সরকারকে জানালে সরকার তাদের চাহিদা মতো তাতে সম্মতি প্রদান করে।
প্রথমে বায়ুসেনার পরিকল্পনা ছিল যে,সরাসরি ফ্রান্স থেকে ১২৬ টি মিরাজ-২০০০ কিনে নেওয়া হোক,যেগুলিকে ভারতেই তৈরী করা হবে। কিন্ত ততদিনে ফ্রান্সের কাছে রাফালে এসে যাওয়া কারনে বায়ুসেনা কিছুটা চিন্তায় পরে যায়। যাই হোক এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে একটা মাল্টি টেন্ডার প্রকৃয়ার শুরু করা হবে,যে টেন্ডার থেকে ১২৬ টি ফাইটার জেট ক্রয় করা হবে এবং সেগুলি সমস্ত ২০১০ এর মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত হবে,এমন ছিল পরিকল্পনা। এই টেন্ডারের নাম দেওয়া হয় MMRCA । এই টেন্ডারে অংশ নেয় Mirage-2000-5, Gripen,F-16 C/D এবং Mig-29 OPV। এই টেন্ডারের RFP জারি হয় ২০০৪ এ এসে।
২০০৪ এ এসে দাড়ানোয়,টেন্ডার প্রকৃয়া অনেক সময় চলে যায়। ফলে ততদিনে আরো ভালো যুদ্ধবিমান বাজারে আসা শুরু করে। ফলস্বরূপ ফ্রান্স টেন্ডার থেকে মিরাজ তুলে নেয় এবং রাফালে কে আনে, রাশিয়া মিগ-২৯ এর বদলে তাদের নতুন মিগ-৩৫ কে নিয়ে আসে,সুইডেন আনে তাদের পরীক্ষাধীন গ্রীপেন এন জি, ব্রিটেন আগে টেন্ডারে না থাকলেও এবার তারা তাদের অত্যাধুনিক টাইফুনকে নিয়ে আসে,আমেরিকা F-16 এর একটা অত্যাধুনিক ভার্সন F-16IN আনে, এছাড়াও তারা সুপার হরনেটকেও এই টেন্ডারে আনে।
টেন্ডারের এত অদল বদল হওয়াতে প্রক্রিয়া আরো দেরি হতে থাকে এবং সর্বশেষে ২০০৮ এ এসে কংগ্রেস সরকার শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করল,তারা ৭.৭ বিলিয়ন ডলারে ১২৬ টি যুদ্ধবিমান ক্রয় করবে। এরপর আরো চার বছর সময় লাগলো টেন্ডার বিজয়ী কে বেছে নিতে। ২০১২ সালে টেন্ডার জিতে ছিল রাফালে। চুক্তি হওয়ার পথে। কিন্তু বিভিন্ন অজানা কারনে,চুক্তি সম্পূর্ণ হয়নি। অবশেষে ২০১৪ এর শুরুর দিকে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ.কে. অ্যান্টোনি জানান — “এখন আমাদের কাছে বাজেট নেই,তাই এখন এসব (চুক্তি) নিয়ে না ভাবাই ভালো।আগামী বছর দেখা যাক”।
পরবর্তী বছরে সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারনে আরও পিছিয়ে যায়। কারন সরকার পরিবর্তন। এই সরকার আসার পর MMRCA টেন্ডার বাতিল করে। তিনি বললেন সরাসরি ফ্রান্স থেকে ৩৬ টি রাফালে ক্রয় করা হবে এবং MMRCA 2.0 টেন্ডার ডাকা হবে,যেখান থেকে বাকি চাহিদার ফাইটার নেওয়া হবে। ঠিক সেই মতো ২০১৬ এর শেষের দিকে (সেপ্টেম্বর মাস খুব সম্ভবত) ভারত-ফ্রান্সের মধ্যে ৩৬ টি রাফালের এর G2G চুক্তি হল,সাথে হলো আরো একগাদা চুক্তি, যেটা মোট ৭.৮ বিলিয়ন ইউরো তে গিয়ে দাড়ালো। আর সেই চুক্তির ফলস্বরুপ ২০২০ এর জুলায়ের শেষে হাতে পেয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
কিন্তু ভেবে দেখেছেন একটা ব্যাপার যখন ২০০১ সালে নতুন যুদ্ধবিমানের খোজ শুরু হয়,তখন বায়ুসেনার হাতে ছিল ৩৯.৫ স্কোয়াড্রন ফাইটার।হাস্যকর ভাবে এই কুড়ি বছরে স্কোয়াড্রন সংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে তা কমিয়ে আজ দাড়িয়েছে ২৯.৫ স্কোয়াড্রন এ। এর দায় ভার কে নেবে বলুন তো ? কুড়ি বছর কেন লাগল একটা আধুনিক যুদ্ধবিমান হাতে আসতে?
এখানেই শেষ নয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল জে.জে. সিং জানিয়েছিলেন যে “আমি ২০০৫ এ তৎকালীন সরকারকে বলি যে,আমাদের টুইন রোটর হেলিকপ্টার (চিনুক) এর প্রয়োজন আছে। কারন আমাদের ফ্রন্ট লাইন পরিকাঠামো ভালো নয়।যুদ্ধকালীন সময়ে,ঐ সব জায়গায় ট্রুপস থেকে শুরু করে,আর্টিলারি পাঠানো অসম্ভব হয়ে পরে। তাই এই ধরনের মাল্টিরোল হেলিকপ্টারের লজিস্টিক সাপোর্ট এর জন বিশেষ প্রয়োজন। আমার এই প্রস্তাব নয়া দিল্লীতে এর টেবিল থেকে ওর টেবিল শুধু ঘুরতে লাগল। আজ প্রায় চৌদ্দ বছর পরে আমরা সেই চিনুক হেলিকপ্টার হাতে পেয়েছি। আমি 14 বছর আগেই এই হেলিকপ্টারের চাহিদার কথা সরকার কে জানাই “।
অর্থাৎ সেইসময়ে নয়া দিল্লীর প্রশাসনিক ভবনে দায়িত্বে থাকা সরকারের মন্ত্রীরা কতটা চিন্তিত ছিল ভারতীয় সসস্ত্র বাহিনীর প্রতি? তারা কতটা গুরুত্ব দিত,তৎকালীন সেনাপ্রধান দের?