নিউজ ডেস্কঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত মানুষ রাইফেল বললে,রাইফেলই বুঝত। প্রায় সব রাইফেলেই একই মাপের গুলি ব্যবহার হত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সারা বিশ্বে চলমান বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চলমান যুদ্ধ রাইফেলের ব্যবহার অনুসারে তাদের বিভিন্ন ভাগ তৈরী করে দিয়েছে।
পার্সোনাল স্মল ফায়ার আর্মস হিসাবে রাইফেল কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় বর্তমানে :–
১. ব্যাটেল রাইফেল
২. অ্যাসল্ট রাইফেল
৩. কার্বাইন রাইফেল
ব্যাটেল রাইফেলঃ একটা ফুল পাওয়ার পার্সোনাল যুদ্ধাস্ত্র। এটিতে যে ধরনের বুলেট ব্যবহার হয়,তা ব্যাক্তিগত যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাটেল রাইফেলের বুলেট হল ৭.৬২×৫১ মি.মি। ব্যাটেল রাইফেলের মূল কাজ অনেক দূর থেকেই শত্রুকে ক্ষতম করা। একটি ব্যাটেল রাইফেল দিয়ে সাধারণত ৬০০ মিটার দুরের টার্গেটকেও সহজেই ক্ষতম করে ফেলা যায়। তবে এটির ব্যবহার আরো দুরের টার্গেট ক্ষতম করতেও সফল ভাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে অত দুরে সম্মুখ যুদ্ধ হয় না। অত দুরের টার্গেট ক্ষতম করতে মূলত স্নাইপার ব্যবহার করা হয়। ব্যাটেল রাইফেল এর বুলেট শক্তিশালী হওয়ায় এতে ঝাকুনি ও বেশি। ফলে এই ধরনের রাইফেল সাধারণত ফুল-অটোমেটিক ব্যবহার হয় না। এগুলিকে সেমি-অটোমেটিক ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ একবার ট্রিগার চাপলে একটি বুলেট বেরোবে। ফুল-অটোতে ব্যাটেল রাইফেলের অত শক্তিশালী বুলেট কে সাধারণ লাইট মেশিন গান থেকে ব্যবহার করা হয়, যেখানে একজন কে নয়, একদল কে টার্গেট করা হয়। তাই ব্যাটেল রাইফেল সাধারণত সেমি-অটোমেটিক হয়।
অ্যাসল্ট রাইফেলঃ অ্যাসল্ট রাইফেলের ব্যবহার ব্যাটেল রাইফেলের থেকেই আসে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে দেখা যায় যে, গড়ে প্রায় অর্ধেক সম্মুখ যুদ্ধই কাছাকাছি দূরুত্ব থেকে হয়। আর সেখানে ব্যাটেল রাইফেল এর শক্তিশালী বুলেট এর থেকে, কম শক্তিশালী বুলেট নিয়েও , আরো বেশি হালকা ও নিখুত রাইফেল বেশি কার্যকর হয়। আর তখন অ্যাসল্ট রাইফেলের ধারণা সেখান থেকেই আসে। তুলনামূলক কম ক্যালিবারের বুলেট (৭.৬২×৩৯ অথবা ৫.৫৬×৪৫ ইত্যাদি) দিয়ে ফায়ার করলে, তাতে ঝাকুনি কম হয়,ফলে তাতে নিখুঁতভাবে ভাবে ফায়ার করা যায় সম্মুখ যুদ্ধে। তবে সম্মুখ যুদ্ধে এটির ব্যভারকে আরো কার্যকর করে তোলে এর পছন্দের ফায়ার মুড। অর্থাৎ অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে আপনি ফুল অটোমেটিক (একবার ট্রিগার চাপলে পুরো ম্যাগাজিন খালি), সেমি অটোমেটিক (এক বার ট্রিগার চাপলে একটি গুলি) অথবা থ্রি-ব্রাস্ট মুড (একবার ট্রিগার চাপলে পরপর তিনটি গুলি বেরোবে) —- প্রয়োজন অনুসারে গুলি চালাতে পারেন। অ্যাসল্ট রাইফেলের ব্যবহার ৪০০ মিটার রেঞ্জের মধ্যেই সাধারণত হয়, তবে এগুলো আরো দুরের টার্গেট ও ক্ষতম করতে সক্ষম।
কার্বাইন রাইফেলঃ কার্বাইন রাইফেল মূলত,অ্যাসল্ট রাইফেলের ছোট ভাই। অর্থাৎ একটি অ্যাসল্ট রাইফেলকে শুধু সাইজে ছোট ও হালকা করে দিলেই কার্বাইন হয়ে যাবে। বাকি সব ফাংশন প্রায় একই। সাইজে ছোট বলে এটির রেঞ্জ কমে যায়। কিন্তু তাতে সমস্যা নেই, এটি মূলত ক্লোজ কমবেট এ ব্যবহার করা হয়। ধরুন কোন বিল্ডিং এর ভেতরে লড়াই চলছে,সেখানে আপনাকে পিস্তলের থেকে শক্তিশালী অথচ অ্যাসল্ট রাইফেলের থেকে বেশি অথবা সাব মেশিন এর মতো কমপেক্ট ফিল চাই–সেক্ষেত্রে এই কার্বাইন ব্যাপক কার্যকরি। মূলত ফাস্ট মুভিং ট্রুপস (স্পেশাল ফোর্স) রা এই কার্বাইন ব্যহার করে থাকে। ন্যাটো স্টান্ডার্ড কার্বাইন ৫.৫৬×৪৫ মি.মি হয়ে থাকে, এগুলি মূলত ২০০-২৫০ মিটার বা তারও কম দূরুত্ব এ ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া পার্সোনাল প্রটেকশন এও কার্বাইন ব্যবহার হয়, সাইজে ছোট হওয়ায় সহজেই গাড়ির ভেতরে নড়াচড়া করা যায়।