“আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তখন আমাদের বাড়িতে ১১ টা নেড়ি কুকুর ছিল” স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

"আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তখন আমাদের বাড়িতে ১১ টা নেড়ি কুকুর ছিল" স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

সুমিত, কলকাতাঃ করোনা পরবর্তী সময়ে OTT প্ল্যাটফর্ম যে সিনে প্রেমিকদের অন্যতম ভরসা হতে চলেছে তা ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে একাধিক সমীক্ষায়। বর্তমান পরিস্থিতে দাড়িয়ে ওয়েব সিরিজের সাথে সাথে বেশ বড় বাজেটের ছবিও রিলিজ করছে নেটফ্লিক্স অ্যামাজন প্রাইমের মতো প্ল্যাটফর্মে।

হলিউড থেকে শুরু করে বলিউড এবং টলিউড সবক্ষেত্রেই প্রশংসা লাভ করেছে এইসকল ওয়েব সিরিজ। সদ্য মুক্তি প্রাপ্তি ওয়েব সিরিজ পাতাললোক। ওয়েব সিরিজটি রিলিজ করার দিন কয়েকের মধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে। মাত্র ৯ টি এপিসোডের এই ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে বলি থেকে শুরু করে টলি তারকাদের। তবে হিন্দি ওয়েব সিরিজে এবার প্রথম দেখা গেল স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে। ডলি মেহরার চরিত্রে দেখা গেছে বাংলার এই টলি তারকাকে। তাঁর চরিত্রসহ বর্তমানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাধিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।

প্রঃ এখন অ্যামাজন প্রাইমে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সুযোগ এল কিভাবে?

কাস্টিং এর  জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানির তরফে। ওয়েব সিরিজটিতে অভিনয়ও করেছেন অভিষেক (হাতড়া ত্যাগির চরিত্রে)। আমার সাথে ২০১৮ শেষের দিকে যোগাযোগ করা হয়েছিল । ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত চলেছিল শ্যুটিং র কাজ।

প্রঃ আগে মুম্বাই কাটিং এর মতো হিন্দি ছবিতে দেখা গেছে তোমায়। ভবিষ্যতে হিন্দি ছবিতে কি প্ল্যানিং আছে?

সেভাবে কোনো প্ল্যান নেই। কারন ২০১৫ তে ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ করেছিলাম, তারপর অনেক প্ল্যান করেছিলাম, কিন্তু সেভাবে কিছু হয়নি। আমার মনে হয় না প্ল্যান করে কিছু হয়। জীবনে ভাবতেও পারিনি আমরা যে ২০২০ আমাদের এভাবে কাটবে।

প্রঃ নিরাজ কবি, জয়দীপ আহলিয়াতের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাদের সাথে কাজ করলে। কেমন লেগেছে?

জয়দীপের সাথে আমি কোন স্ক্রিন শেয়ার করিনি। ওনার সাথে কাজ করা হয়নি পাতাললোকে। নিরাজের সাথে এর আগে ব্যোমকেশে কাজ করেছি। ওর সাথে আমার আগেই আলাপ ছিল। ভালোই লেগেছে খুবই বড়ো মাপের অভিনেতা।

প্রঃ পাতাললোকে তুমি একজন সাংবাদিকের স্ত্রী পাশাপাশি অ্যাংজাইটির রোগী। চরিত্রটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

সব চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং। সাংবাদিকের স্ত্রী হলে চ্যালেঞ্জিং হবে, অ্যাংজাইটির রোগী হলে চ্যালেঞ্জিং হবে, আর অন্যক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হবে না, আমি সেটা বিশ্বাস করিনা। সব চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং, কারণ সাদামাটা একটা চরিত্র যার মধ্যে কোনো কম্পলিকেশান নেই, সেটাও ফুটিয়ে তুলতে হয় এমনভাবে যাতে চরিত্র মানুষের কাছে বাস্তব বলে মনে হয়। কঠিন চরিত্র বা সোজা চরিত্র বলে কিছু হয়না। মানুষের কাছে ফুটিয়ে তোলা এবং বাস্তবযোগ্য করে তোলা মাত্র কঠিন কাজ।

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

প্রঃ মাতৃভাষায় এতদিন ছবি করেছ, আর এটা জাতীয়ভাষায় ওয়েব সিরিজ করলে। দুটো ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্য কি বুঝলে?

আমার কপালটা খুব ভালো যে এখনো মুম্বাইয়ের খারাপ দিকটা দেখে উঠতে পারিনি। আই অ্যাম ভেরি লাকি যে খুবই ভালো ইউনিটের সাথে কাজ করেছি।

কলকাতায় ২০ বছর ধরে কাজ করছি, তাই জানি কলকাতার তিনটে বড়ো অসুবিধা আছে।

প্রথমত, অভিনেতা হোক বা টেকনিশিয়ান, কেউই সঠিক সম্মান পায় না।

দ্বিতীয়ত, প্রোডিউসাররা মনে করেন যে কাজ করিয়ে পয়সা দিয়ে বিরাট দয়া করছেন তারা। কলকাতায় একটা ট্রেন্ড হয়েছে যে কাজ করো কিন্তু টাকার আশা কোরো না। কাজ করে পয়সা দেওয়ার জন্য এমন করতে হয় যেন ভিক্ষে চাওয়া হচ্ছে। আমারই প্রাপ্য টাকা আমাকে পেতে গেলে কাঠখড় পোড়াতে হবে।

তৃতীয়ত, এক প্রোডিউসার একটা ছবি করতে গিয়ে অভিনেতা, টেকনিশিয়ানদের টাকা মেরে দিল, টাকা দিল না। শ্যুটিং অর্ধেক হয়ে বন্ধ হয়ে গেল, ঠিক তার ৬ মাস পরে সেই একই পরিচালক একই প্রডিউসারের সাথে নতুন ছবি করতে চলে গেল। পরিচালক নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে তার সমাধান করল। যেখানে কারোর প্রতিবাদ করার কোনো ক্ষমতা নেই সেখানে প্রোডিউসারের তো মনেই হবে, যে দিজ ইস দ্য ইজি থিং টু ডু।

প্রঃ পাতাললোকে তুমি একজন ডগ লাভার এবং এই ওয়েব সিরিজে এই নিয়ে একটা সুন্দর মেসেজ আছে। তুমি ব্যাক্তিগতভাবে কতটা ডগ লাভার? বাড়িতে তোমার কি কোনো পোষ্য আছে?

আমি ছোট থেকেই ডগ লাভার। বাড়িতে ছোট থেকেই কুকুর ছিল। আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তখন আমাদের বাড়িতে ১১ টা নেড়ি কুকুর ছিল। সাবিত্রির(পাতাললোকে অভিনীত একটি কুকুর) সাথে রিলেট করতে কোনো অসুবিধা হয় নি। তবে সবথেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হল যে এখানে রাস্তার কুকুরদের দেখানো হয়েছে, পেডিগ্রিদের দেখানো হয় নি। আমরা বাংলায় যাদের নেড়ি বলি, তাদের প্রতি আমাদের সবসময় অবজ্ঞা, অবহেলা কাজ করে। আমরা যারা বাড়িতে কুকুর রাখতে চাই বা পুষতে চাই তারা দামি বা পেডিগ্রি কুকুর পুষতে চাই, যেটা তাদের সোশ্যাল স্টেটাস বাড়াবে। সেখান থেকে বেরিয়ে পাতাললোকে রাস্তার কুকুর দেখানো হল, তাই আমার কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট ছিল। আমার বাড়িতে একটি নেড়ি আছে। তিনিও একজন মহিলা। ওর নাম ফুলকি।

প্রঃ ২০২০ অর্থাৎ বিষেবিষ গোটা পৃথিবী সহ ভারতবর্ষ তথা গোটা বাংলা একটা বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেই ব্যাপারে কি বলবে?

আমি জানুয়ারি মাসে একটা ট্যুইট করেছিলাম যে এই বছরটা বিষে বিষ। আমার এতটা দূরদর্শিতা নেই যে এরকম একটা অবস্থা ভেবে করেছিলাম। বুঝিনি যে এরকম খনার বচনের মতো ফলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *