অনন্যা সরকারঃ বিপ্লবে আন্দোলনে শেষ হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত শরীর নির্লিপ্ত প্রেম আর হানাহানি। এক ক্যানভাসে সময়কে বাঁধছেন চিত্রপরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রথম কুর্মালি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘ডেথ অফ ডেথ’ একটি ডকুমেন্ট্রি-এর আন্তর্জাতিক সাফল্যের পর তাঁর পরবর্তী বাংলা ছবি ‘শিবরাত্রি’-র শুটিং নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
মৃত্যুকে নিয়ে এটি হবে রাজাদিত্যর চতুর্থ ফিচার ফিল্ম। এর আগে তিনি দুটি ডকুমেন্টারিও করেছেন। রাজাদিত্য হলেন প্রয়াত খ্যাতনামা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দোপাধ্যায়ের ছোট ভাই।
ইংরেজি, বাংলা, এস্তোনীয়, ফিনিশ, সুইডিশ ভাষায় তাঁর একটি নতুন ছবি আসছে। যেটি চলচ্চিত্রটি হবে টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে। যেটি একটি ইন্দো-ইউরোপিয়ান ছবি। এখনও পর্যন্ত যেই ছবির নাম ঠিক করা হয়নি। ফিনল্যান্ড ও এস্তোনিয়া ভাষাতেও তৈরি হবে এই ছবিটি। ফিল্মটির ইংরেজিতে সাবটাইটেল করা হবে।
‘‘এক জন শিল্পীর হাত কি স্টেনগান ধরতে পারে? এই খোঁজাই আমার আগামী ছবি ‘শিবরাত্রি’-র বিষয়। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানবশরীর ছিন্নভিন্ন করাটাও যেমন সন্ত্রাস, এক শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাকে নীরবে নিভৃতে হত্যা করাটাও সন্ত্রাস,’’ বললেন রাজাদিত্য।
ছবি করার ক্ষেত্রে কোনও রকম আপোষ চান না তিনি। এই ছবিতে বাংলাদেশের নতুন মুখ আরিয়ান দত্তকে নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করিয়েছেন পরিচালক।
এ ছবিতে যেন পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের রুক্ষ মালভূমি মানুষের যন্ত্রণার ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে বলে জানাচ্ছেন রাজাদিত্য। ‘‘খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছতে পেরেছি আমরা’’, বললেন রাজাদিত্য। প্রকৃতি বরাবরই তাঁর ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছবিতেও ছিল, ‘শিবরাত্রি’র গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়।
মূল গল্প সাহিত্যিক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিবরাত্রি’ অবলম্বনে হলেও চিত্রনাট্যের বেশিরভাগ সংলাপ লিখেছেন পরিচালক নিজেই। সত্যেনের ভূমিকায় সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিবরাত্রি’ কি তা হলে মুষ্টিমেয় চরিত্রনির্ভর ছবি? ‘‘একটা মানুষকে কেন যুদ্ধ লড়তে হয়? এ প্রশ্ন তো সারা বিশ্বের! এই ছবি সব মানুষের জন্য।’’ সাফ জানালেন পরিচালক। সেই কারণেই এই ছবির থিয়েট্রিকাল রিলিজের কথা ভেবেছেন রাজাদিত্য।
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত এই পরিচালকের এটি হবে জীবনের প্রথম ট্রিলজির হবে। তিনি প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর ইউরোপে বাস করেছেন ।
এটি ব্যাকবেঞ্চার ফিল্মস এবং গ্লোবসিম ফিনল্যান্ডের একটি ইন্দো-ইউরোপীয় যৌথ উদ্যোগ হবে। ফিল্মের ইউরোপীয় পার্ট পরিচালনা করতে ইতিমধ্যে রাজাদিত্য তাঁর দল এবং প্রকল্প পরামর্শদাতা সুইড-ফিন গোরান ম্যাকনিতে এসেছেন।