মৌনীতা চট্টোপাধ্যায়, সুজয় প্রসাদ সহ একাধিক ব্যাক্তিত্বের নতুন প্রয়াস কাব্যনাটক মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘চিত্রাঙ্গদা মান্ডি’

একেকটা জীবন আসলে একেকটা জাহাজ হতে চায়। হয়তো টাইটানিকের মতন অনেকটা । যার গন্তব্যে পৌঁছানো টাই হয় না । কেবলই ডুবে যায়। জীবন অনন্তকালের সেই প্রমোদ তরণী ই হতে চায়। আসলে ডুবে যায় এর মধ্যে বড় মায়া। মেয়েদের লড়াই অসমাপ্তই থাকে চিরকাল। কবি মল্লিকা সেনগুপ্তের কলমে সে লড়াই চিরকালই বাঙ্ময়। ‘চিত্রাঙ্গদা মান্ডি’ কাব্য নাটকে তার উচ্চারণ আরও ঋজু।

আসলে মেয়ে জন্মানোর নিষেধ রয়েছে । ‘ভালো মেয়ে’ হয়ে বাঁচার নিষেধও মেয়েদেরই আছে —–

গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তাই ডুবে যেতে হয়।তাই বোধহয় ‘আমার দুর্গা’ রা ডোবে। প্রিয়তমা ডুবে যায়। কোনদিনও ভেসে ওঠা হয়না চিত্রাঙ্গদাদের। সেকালেও, একালেও। মৌনীতা চট্টোপাধ্যায় এখানে চিত্রাঙ্গদা আখ্যান তুলে ধরে।

রাজনন্দিনী চিত্রাঙ্গদা’-র শস্ত্রঝংকারের অহংকার সমেত ভ্রুকুটি উপহার পায় অর্জুন। তারপরও চিত্রাঙ্গদা তার জন্যই ডুবে মরে।  একালের বনযোদ্ধা চিত্রাঙ্গদা মান্ডি বনসেনা অর্জুনের জন্য ডোবে গুলির ছররা মেখে, স্বপ্ন -সংগ্রাম মাঝপথে ছেড়ে, লড়াই অসমাপ্ত রেখেই । অর্জুনরাও কি তার জন্য মৃত্যু বেছে নেয়?

সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠ শোনায় অর্জুনের কথা। আসলে ডুবতে ভালো লাগে। বড় মায়া রয়েছে ডুবে যাওয়া তে। চিত্রাঙ্গদার   , কোনও একদিন, কোনও একখানে, কোন একজনের তরে ডুবে যাবে বলেই ভেসে থাকা খানিকটা জীবন। চিত্রাঙ্গদাদের মেয়েগল্প।  বড়ই মেঘলা উপাখ্যান। ঋদ্ধ, জারিত হয়েও পরাজিত প্রতীক্ষায় দিন গোনা।  মিলন চেয়ে সদা বিরহী। ‘কার মিলন চাও’- রবীন্দ্র গানটি মনোময় ভট্টাচার্য  গেয়েছেন ।আর পুরো নাটকটি কে সুরে বেঁধেছেন সুব্রত বাবু মুখোপাধ্যায়।

চিত্রাঙ্গদা  কে নিয়ে কী বললেন মৌনীতা? তাঁর মতে, “বসন্তের পাগল হাওয়া যেমন হারিয়ে যায়, ডুবে যাওয়াটাও আসলে হারিয়ে যাওয়া।কবি মল্লিকা সেনগুপ্তের এই লেখা অর্ধেক আকাশের নিজের কথা। সুজয় দার কণ্ঠের ঋজুতা পূর্ণতা দিয়েছে চিত্রাঙ্গদাকে। মনোময় দা’র গান আরও গভীরতা এনেছে সংলাপে। কাব্যনাটক টিকে আবহে বেঁধে দিয়েছেন সুব্রত বাবু দা।

শিল্পী সুজয়প্রসাদ চ্যাটার্জি জানালেন, “মৌনিতার দীর্ঘমেয়াদি  পরিশ্রমের ফসল এই কাব্যনাটক টি। এই রচনার অর্জুন মহাভারতের ক্ষাত্রবীর্যে পরিপূর্ণ অর্জুন নন, বরং তিনি একজন সাধারণ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *