‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারী নিয়ে ঘর করি।’ বাংলার এটিই বোধহয় প্রচলিত ও সর্বজনীন সত্য। কলেরা, প্লেগ বা সান্নিপাতিক জ্বর একসময় ছিল বাংলার ঘরে ঘরে। এই সমস্ত রোগে মৃত্যুই ছিল সাধারণ মৃত্যু। ১৯১৪-১৮ সাল বস্তুত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আবহাওয়ায় ভারতবর্ষে স্পেনীয় সৈনিকদের হাত ধরে এলো স্প্যানিশ ফ্লু। সেই জ্বরের প্রকোপে পড়লো ঠাকুরবাড়িও। ১৯১৮ তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘ওলাউঠার বিস্তার‘ নামে একটি প্রবন্ধ ; যার মূল উপপাদ্য বিষয় ছিল কীভাবে কলেরা আমাদের দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ্যণীয়, ১৯১৮–১৯২০ সালের মধ্যে গোটা ভারতবর্ষে এই স্প্যানিশ ফ্লু–তে মৃতের সংখ্যা আনুমানিক ১কোটি ২০ লক্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতি আঘাত হেনেছিল স্বয়ং রবির উপর। একদিকে মারী জ্বর, অন্যদিকে কবিপরিবারে ঘটে চলা একের পর এক মৃত্যু নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ করা রবির জীবনবোধে এসেছিল আমূল পরিবর্তন। সমকালীন রবীন্দ্রনাথের রচনা,
তাঁর ব্যক্তিগত চিন্তা এসব নিয়েই শিল্পী সুজয়প্রসাদ চ্যাটার্জি-র অভিনব উদ্যোগ ‘যুদ্ধজ্বর ও রবীন্দ্রনাথ’। এসপিসিক্রাফটের সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘হাফ পেন্সিল’ ও ‘ঘোষ কোম্পানির’ প্রযোজনায় মুক্তি পেতে চলেছে ভিডিও টি । থাকছে রবি ঠাকুরের রচনা, গান, সমকালীন পরিস্থিতির উল্লেখ । ভিডিওটির সমগ্র বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন শ্রীমতী চৈতালি দাশগুপ্ত । এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ” *এর বিষয়ের ভাবনা টা সুজয়ের। প্রশান্ত কুমার পাল ও প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় এই দুই রবীন্দ্র জীবনীকারের বিস্তারিত আলোচনায় তথ্য সংগ্রহ করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। প্লেগ, কলেরা নিয়ে লেখা হলেও ‘যুদ্ধজ্বর‘ নিয়ে কেন লেখা হয়নি তা একটা বিস্ময়। বস্তুত, রবীন্দ্রনাথ এই সময়ে প্রায় ১৫‘টি গান রচনা করেন। স্ক্রিপ্ট লেখা তো রচনা লেখা নয়।যা তথ্য পেয়েছিলাম তা দিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখতে বসে যেন নতুন করে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করলাম“।
ভাষ্যপাঠে আছেন চৈতালি দাশগুপ্ত ও সুজয়প্রসাদ চ্যাটার্জি । সৃজনে রাজা দাশগুপ্ত, চৈতালি দাশগুপ্ত, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ও সুজয়প্রসাদ চ্যাটার্জি। সমগ্র ভিডিওটি সম্পাদনা করেছেন উত্তরণ দে । গোটা পরিকল্পনায় রয়েছেন স্বয়ং সুজয়প্রসাদ চ্যাটার্জি।