এখন নভেম্বর মাস চলছে। এর মধ্যেই হালকা হালকা ঠান্ডা অনুভব হওয়া শুরু করেছে। আর কিছুদিন পেরোলেই জাঁকিয়ে শীত পড়বে। সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকম কাজের চাপ, চিন্তা, পরিশ্রম এই সমস্ত থেকে রেহাই পেতে লোকজন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য এই শীতের মরসুমকে বেছে নেয়। আর তাছাড়াও সামনেই অগ্রহায়ণ মাস। এই মাস হল বাঙ্গালিদের কাছে, বিয়ের মাস। বিয়ের পর হানিমুনে যাওয়ার কথা যদি কেউ ভেবে থাকেন তাহলে অনায়াসে যেতে পারেন এই সমস্ত সুন্দর জায়গায়।
বেশিরভাগ দম্পতি বিয়ের পর বিদেশকে বেছে নেন হানিমুনের জায়গায় হিসেবে। কারণ কি?
কারণ একটাই বিদেশের সৌন্দর্য অনেক বেশি, যে সৌন্দর্যের দিকে একবার তাকালেই চোখ ফেরানো যাবে না। কিন্তু জানেন কি বিদেশ না গিয়েও এমন সৌন্দর্যের জায়গা আমাদের দেশেও পাওয়া যেতে পারে। ভারতেই আছে এমন চার সুন্দর জায়গা যা বিদেশকেও টেক্কা দেবে। এই চার সুন্দর জায়গা কি কি?
চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
খাজ্জিয়ার– হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত একটি মফঃস্বল শহর হল খাজ্জিয়ার, যাকে ভারতের সুইজারল্যান্ড বলে অভিহিত করা হয়। যারা এক দুই দিনের জন্য ছুটি কাটাতে চান তারা এই জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন। এখানে অবস্থিত খাজ্জিয়ার হ্রদ মন চাইলে সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন। সাথে রয়েছে খারজ্জিয়ার নাগ মন্দির, যারা প্রচন্ড ধার্মিক প্রকৃতির মানুষ তারা এই মন্দিরে গিয়ে পুজোও দিয়ে আসতে পারেন। মন্দিরটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং এটি ৮০০ বছরের পুরোনো একটি মন্দির। যদি গ্রাম ঘুরে দেখতে চান তাহলে পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি নিয়েও বেরিয়ে পড়তে পারেন। এখান থেকে মহাদেবের বাসস্থান অর্থাৎ কৈলাশকে স্পষ্ট চাক্ষুষ করতে পারবেন। তুষারপাতের সময় এই খাজিয়ার গ্রামকে এতই সৌন্দর্য দেখায় যে সৌন্দর্য হার মানাবে সুইজারল্যান্ডকেও। তাই সাধে কি আর একে ভারতের সুইজারল্যান্ড বলা হয়। এখানে ঘুরতে যাওয়ার ভালো সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ– আমরা অনেকেই ভাবি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আসলে একটিমাত্র দ্বীপ। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ছোট এবং বড়ো সব মিলিয়ে মোট ৫০০ টিরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। তবে সব দ্বীপে জনবসতি না থাকলেও, মোটামুটি ৩০টি দ্বীপে জনবসতি রয়েছে। এখানে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সমুদ্র সৈকত নজর কাড়ে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টস, যেমন- স্কুবা ডাইভিং, জেট স্কিটিং, পেরা স্লাইডিং, বোটিং, ট্রেকিং, ইত্যাদি। যারা জলে ভয় পান না তারা নিশ্চিন্তে এই জায়গায় এসে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও এখানে রয়েছে ভারত মহাসাগরের নীচে প্রবাল প্রাচীরের সংসার দেখার সুযোগ।
পন্ডিচেরি– ভারতের সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে একটি হলো পুদুচেরি। এর নাম প্রথম দিকে পন্ডিচেরি ছিল। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নতুন নামকরণ হয় পুদুচেরি। এক নজরে দেখে মনে হবে যেন এক টুকরো ফ্রান্স ভারতে অবস্থিত। এখানে আছে মন ভালো করে দেওয়ার মতোন কিছু সমুদ্র সৈকত। যেমন- সার্ফিংয়ের জন্য অরোভিল বিচ জনপ্রিয়, এছাড়াও আছে প্যারাডাইস বিচ যেখানে ব্যাক ওয়াটার বোটিং উপভোগ করতে পারেন। যাদের যোগাসন নিত্যদিনের অভ্যাস, তারা চাইলেই যেতে পারেন প্রমেনেড বিচ। এছাড়াও কিছু জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত হলো মাহে বিচ, কারাইকাল। একসময় ফরাসি উপনিবেশ এখানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল তার চিহ্ন আজও পাওয়া যায়। ফ্রেঞ্চ কলোনির ফ্রেঞ্চ কোয়াটার্স ও সেখানকার রাস্তা গুলি হল ইন্দো-ফরাসি নিদর্শনের সেরা উদাহরণ। এখানে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার গুলি ‘হোয়াইট টাউন’ নামে পরিচিত। এখানে ঘুরে দেখার মতোন জায়গা হল ভারতী পার্ক, অরবিন্দ আশ্রম, লা মেসন রোজ, কিউরিও সেন্টার।
আলেপ্পি– রোমান্টিক শহরের নাম বলতেই আমরা বুঝি ভেনিস শহরকে। কিন্তু, এই ভেনিস শহরে ঘোরার জন্য ইতালিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এই ভেনিস শহরটি আমাদের দেশেই অবস্থিত। আর সেটি হল আমাদের দেশেই অবস্থিত আলেপ্পি। এই শহরটি কেরালায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই শহরটি সাবেকি সাজে সজ্জিত এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অপূর্ব। আলেপ্পি শহরটি চারিদিকে হ্রদ এবং সমুদ্র দিয়ে পরিবেষ্টিত। এই শহরে অবস্থিত নদী গুলির জল খুবই স্বচ্ছ প্রকৃতির। এখানে প্রকৃতির সমস্ত জিনিস একে অপরের সাথে প্রাকৃতিক উপায়ে অথবা কৃত্রিম উপায়ে সংযুক্ত রয়েছে। আলেপ্পিতে ঘুরতে গেলে যদি হাউস বোটে না থাকেন, তাহলে অসাধারণ অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন না।