অনেকেই খাবারের সঙ্গে কমবেশি কাঁচা পেয়াজ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এর উপকারিতা কি জানেন! অনেকে না জেনে শুনেই এটি খেয়ে থাকেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে কোন জিনিসের যেমন উপকারিতা থাকে ঠিক তেমনি তার অপকারিতাও থাকে। কাঁচা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম নয়। ভারতে কাঁচা পেঁয়াজ আমদানি হয় নাসিক থেকে। এছাড়া দক্ষিণ ভারত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে পিঁয়াজ চাষাবাদ হয়।বাংলাদেশও প্রচুর পরিমানে পিয়াজ উৎপাদন হয়।
উপকারিতা :-
১. মুখের বদ-গন্ধ দূর করে – কাঁচা পেঁয়াজ খেলে সাময়িক সময়ের জন্য মুখে দুর্গন্ধ হয় ঠিকই কিন্তু যাদের আগাগোড়া দুর্গন্ধের সমস্যা রয়েছে সেটা নিরাময় হয়। কারণ পেঁয়াজ মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি মরতে শুরু করে। সেই কারণে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
২. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: একজন মানব শরীরে দু’ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। খারাপ এবং ভালো। এই দুটি কোলেস্টেরল সমানুপাতিক থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে। কিন্তু কোন একটি কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে শরীরে ভাল কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এল-এর মাত্রা বাড়িয়ে একদিকে যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখে, তেমনি অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় পেঁয়াজ।
৩. জ্বরের প্রকোপ কমায়: অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুদিনের ব্যবধানে তার জ্বর হচ্ছে। হাজার ওষুধ খেলেও সমস্যা দূর হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে শুতে যাওয়ার আগে একটা পিঁয়াজ কেটে তার সঙ্গে অল্প করে আলু এবং ২ টো রসুনের কোয়া মিশিয়ে মোজার মধ্যে রেখে সেই মোজা পরে সারারাত ঘুমাতে হবে। এমনটা কয়েকদিন করলেই তার এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
৪. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে: ডায়াবেটিসের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। বুড়ো হোক কিংবা বাচ্চা কোনো বয়স ছাড়াই অনেকই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। ২১ শতকের সব থেকে ভয়ঙ্কর এই রোগকে দাবিয়ে রাখতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগই থাকে না।
৫. ইনসমনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমায়: ঘড়ির কাঁটা সকালের দিকে এগিয়ে গেলেও চোখের পাতা এক করতে পারেন না, এমন মানুষের অভাব নেই। তাহলে তো প্রতিদিনের ডায়েটে পেঁয়াজের থাকা চাইই চাই। কারণ ইনসমেনিয়ার মতো রোগের উপশমে এই সবজিটি দারুন কাজে আসে।
৬. পুড়ে গেলে কাজে আসে : রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে যাওয়ার ঘটনা গৃহিণীদের সঙ্গে চিরচেনা। এক্ষেত্রেও পিঁয়াজ দারুন উপকারে লাগে। কারণ পুড়ে গেলে, ক্ষতস্থানে এক টুকরো পিঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিলে অল্প সময়েই জ্বালা ভাব কমে যায় ও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতও সেরে যায়, এটা প্রমাণিত।
৭. আঁচিল দূর করে: অনেকের গালে আঁচিল হয়। যেটা এক প্রকার অসহ্যকর হয়ে ওঠে তার কাছে। তার এই সমস্যা সমাধানের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সবজি হলো পেঁয়াজ। গোল করে পেঁয়াজ কেটে আঁচিলের উপর রেখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। যাতে সেটি পরে না যায়। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে এমনটা করলে অল্প দিনেই আঁচিল খসে পরে যাবে।
৮. স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়: সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তির যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একাধিক ব্রেন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৯. ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখে: ব্রেন, কোলোন এবং ঘারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যতে এসে দাঁড়ায় যদি প্রতিদিন পেঁয়াজ খাওয়া যায়। কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরের অন্দরে ক্যান্সার কোষের জন্ম হতে দেয় না। ফলে এমন ধরনের মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
১০.কাশির প্রকোপ কমায়: পেঁয়াজকে কেটে তার রস সংগ্রহ করে তার মধ্যে কয়েক ড্রপ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুবার পান করলেই কাশির সমস্যা মিটবে।
অপকারিতা :-
১. পেঁয়াজে অ্যালার্জি – যাদের পেঁয়াজের আ্যালার্জি রয়েছে তাদের এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ অ্যালার্জি থাকা সত্বেও যদি কেউ পেয়াজ খান লাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি মাঝে মাঝে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
২. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা – বেশি পরিমাণে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে অনেকের শরীরের সহ্য হয় না। সেক্ষেত্রে পেট ফুলে গ্যাস হতে পারে কি হওয়া অনেক সময় বমি বমি ভাবের লক্ষণ দেখা যায়। তাই কারো শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে পেঁয়াজকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।