বর্তমান পৃথিবীতে নানান ধরনের অসুখ দেখা যায়। তার মধ্যে ডায়াবেটিস একটি অন্যতম অসুখ। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ মারা যায় এবং প্রতি ১০ সেকেন্ডে দুইজন ডায়াবেটিস রোগী সনাক্ত করা হয়।
তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ফল:
- আঙুর
আঙুরের মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল রেসভারেট্রল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- আপেল
ডায়াবেটিক হলে অবশ্যই রোজ খান আপেল। এমনকী, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতেও খান আপেল। টাইপ টু ডায়াবেটিস রুখতে আপেল দারুণ কাজ করে।
- ব্লুবেরি
অ্যান্থসায়ানিন থাকার কারণে ব্লুবেরি খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
- স্ট্রবেরি
লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে স্ট্রবেরি। যার ফলে স্ট্রবেরি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজম শক্তি বাড়ে, ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- পেয়ারা
লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পাশাপাশি পেয়ারার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য রুখতে সাহায্য করে।
- তরমুজ
তরমুজে থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রক্তে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রভাবে হওয়া কিডনির ক্ষতি রুখতে সাহায্য করে তরমুজ। এর মধ্যে থাকা লাইকোপেন নার্ভের সমস্যাও রুখতে পারে।
- চেরি
ব্লুবেরির মতোই চেরিতেও রয়েছে অ্যান্থসায়ানিন। যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস রুখতে চেরি খুবই উপকারী।
- পেঁপে
পেঁপের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শুধু ডায়াবেটিস রুখতেই নয়, হার্ট ও নার্ভের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও উপকারী।
- কমলালেবু
ফ্লাভনলস ও ফেনোলিক অ্যাসিড রয়েছে কমলালেবুর মধ্যে। এই দুই উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী।
- বেদানা
সব ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে বেদানায়। এর ফ্রি র্যাডিক্যাল ডায়াবেটিসের মোকাবিলায় সাহায্য করে।
শুধু ফল নয় এমন কিছু খাবারও রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন খাবার:
- বার্লি
এটি প্রাচীন একটি শস্য। মানুষেরা প্রথম যেসব শস্যের চাষ শুরু করে বার্লি তার মধ্যে একটি। এটি সহজেই দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার। বার্লি রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে এবং কোলোস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- লাল চাল
সাদা চালের ভাত রক্তে সুগারর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং লাল চালের ভাত খান। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্তত ১৫% কমে আসবে। আর ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে অন্য কোনো শস্যজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্তত পক্ষে ৩৫% কমবে।
- দই
এতে ক্যালোরি কম থাকার কারণে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে দেয় না।
- তুলসী
ঔষধি গাছ তুলসীকে ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন বলা হয়। তুলসীপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। খালি পেটে তুলসী পাতার রস খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। চাইলে তুলসীর রস আপনি চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- সবুজ শাকসবজি
সবুজশাক সবজি ২ ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। পালং শাক, পাতা কপি, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা ইত্যাদি খাবারে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম।গবেষণায় বলা হয়, সবুজ শাক সবজি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
- মাছ
গবেষণায় দেখা যায়, মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজের ঘনত্ব কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে। এতে চর্বিহীন প্রোটিন রয়েছে।
- ডিমের সাদা অংশ
ডিম পেশি গঠনকারী খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে উচ্চ মানের প্রোটিন রয়েছে। ডিমের সাদা অংশে উচ্চ মানের চর্বিহীন প্রোটিন থাকে এবং কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যেগুলো করা উচিত-
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাঁটার ক্ষেত্রে টানা ৪০ মিনিট একটানা হাঁটলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- এমন ব্যায়াম বা পরিশ্রম করতে হবে, যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। তবে প্রথমে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে।
- দেহের ওজন বাড়তে দেয়া যাবে না।