হিন্দুধর্মের সব দেবতাদের হাত আছে কিন্তু একটি মাত্র দেবতা আছে যার হাত নেই সেই দেবতাটি হলেন জগন্নাথ।কিন্তু কেন সব দেবতাদের হাত আছে শুধু দেবতাদের মধ্যে জগন্নাথদেবের হাত নেই কেন এবং কী সেই কারণ যার ফলে দেবমূর্তিকে অসম্পূর্ণ রেখেই তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হল।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর তাঁর রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর একটি মন্দির বানাবেন ঠিক করলেন।তারপর বানানোর ব্যবস্থা করা হল কিন্তু মূর্তি বানাতে গিয়ে রাজা সমস্যায় পড়লে যে কেমন রূপ দেবেন বিষ্ণু দেবতার বিগ্রহকে। এই সমস্যার কথা ইন্দ্রদ্যুম্নর ব্রহ্মাদেবকে।তখন ব্রহ্মাদেব ইন্দ্রদ্যুম্নরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে সে ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে জেনে নিতে যে কেমন হবে তাঁর বিগ্রহ।
ব্রহ্মাদেবের কথায় ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর ধ্যান করতে শুরু করলেন। তাঁর ধ্যানে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাঁকে জানালেন যে পুরীর কাছেই সমুদ্রে যে নিমগাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে, সেখান থেকেই মূর্তি নির্মাণ করতে হবে তাঁর। বিষ্ণুদেবের কথামতো সমুদ্রে ভেসে আসা নিমগাছের গুঁড়িকে নিয়ে আসা এসে রাজার শিল্পী নিযুক্ত করলেন বিগ্রহ বানানোর কাজে।কিন্তু বিগ্রহ মূর্তি বানাতে পারছিলেন না শিল্পীরা কারন যতবারই গাছের গুঁড়িটি কাটতে যাওয়া হচ্ছে, ততবারই ভেঙে যাচ্ছে। আর এই সমস্যার সমাধানে উপায় জানাছিল না রাজার।
তখন এই সমস্যার সমাধানের জন্যে বিশ্বকর্মা একটি শিল্পীর ছদ্মবেশে রাজার সামনে গিয়েছেন।এবং রাজাকে মূর্তি বানাতে সাহায্য করবেন বলে জানান। কিন্তু তার একটি জানালেন এক শর্ত ছিল।সেটি হল যে তিনি মূর্তি দরজা বন্ধ করে বানাবেন এবং আর তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন দরজা খোলা না হয় যদি খোলা হয় তবে মূর্তি বানানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই দেবেন।এতে রাজা সম্মত হলেন। তারপর বিশ্বকর্মা বন্ধ দরজার আড়ালে মূর্তি বানানোর কাজ শুরু করলেন।
যথারীতি বিশ্বকর্মা তার মূর্তি বানানোর জন্য অনেকদিন সময় লাগছিল।কিন্তু রাজা মূর্তিটি দেখার কৌতূহল সামলাতে না পেরে একদিন দরজাটি খুলে ফেললেন।তারপর বিশ্বকর্মা তার পরিচয় দিলেন রাজাকে এবং জানালেন যে বিষ্ণুর আদেশেই তাঁর মূর্তি নির্মাণের কাজে মর্ত্যে আগমন। কিন্তু রাজা যেহেতু তাঁর শর্ত ভঙ্গ করেছেন, তাই বিশ্বকর্মা আর বানাতে পারেন না সেই মূর্তি।এরপর বিশ্বকর্মা মূর্তির কাজ অসমাপ্ত রেখেই স্বর্গে ফিরে গেলেন।
রাজা নিজের অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হল তখনই ভগবান বিষ্ণু রাজাকে দেখা দেন।এবং জানান যেএই অসমাপ্ত মূর্তিকেই মন্দিরে স্থাপন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে।আর এই জন্যই জগন্নাথদেবের হাত নেই।